মত প্রকাশ

জনগনের চাকরদের স্পর্ধা কমাতে হবে

মানিক মুনতাসির :
একজন কাস্টমস কমিশনার চিটাগং পোর্টে পোস্টিং নিতে ঘুষ দেন ১০ কোটি টাকা। পুলিশের একজন পরিদর্শক পছন্দের জায়গায় পোস্টিং নিতে ঘুষ দেন ২০ কোটি টাকা। আর একজন ট্রলিম্যান ঢাকা এয়ারপোর্টে বহাল থাকার জন্য খরচ করেন ন্যুনতম ১ কোটি টাকা। একজন সাব রেজিস্টারের চাকরি পেতেই কোটি টাকা দোয়ার নজির আছে। এটা গল্প নয়, সত্যি।
আমার বাবা বলতেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাশ করার চেয়ে ফেল করা খুবই কঠিন। ঠিক সে রকমই হলো সরকারি চাকুরী হওয়ার চেয়ে তা চলে যাওয়া আরো দু:সাধ্য। তবে এবার সেটাও হবে যদি অধ্যাদেশটি কাজে লাগানো যায়৷

আবার এটাও বলা হয় যে, সরকারি চাকুরি হলো দুধেল গাভী৷ যা আমৃত্যু দুধ দিয়ে যায়।

আমাদের এখানে দু:খজনক ব্যাপার হলো সরকারি চাকুরেরা নিজেদর মালিক আর প্রজাদের চাকর ভাবেন সেই বৃত্তটা এবার হয়তো একটু ভাংগার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

একজন ড্রাইভার যাতে শত কোটি টাকার মালিক অন্যায়ভাবে না হতে পারেন সেটাতেও কিছুটা কাজ হবে এই অধ্যাদেশের ফলে। কিন্তু এই চাকুরীজীবি নামের রাষ্ট্রীয় চোর ডাকাতরা তাই চিল্লা-চিল্লী করে সবকিছু অচল করে দিতে কোমর বেঁধে নেমেছে। এর সাথে আসল কলকাঠি নাড়তেছে সাবেক স্বৈরাচার আমালের চোর- ডাকাতেরা।

এটা ঠিক যে অন্তর্বর্তী সরকার সরকারি চাকুরী বিধির যে অধ্যাদদেশটি জারি করেছে সেটির কিছু জায়গায় সমস্যা আছে। সেগুলো বসে ঠিক করতে পারতো। আলোচনা করে যদি ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ থামানো যায় তবে এদের আন্দোলন কেন নয়? কিন্তু এদের মূল লক্ষ্য হলো অন্যকিছু। ঘুষ বন্ধ হয়ে গেলে তো এদের বড়লোকী আর খবরদারী বন্ধ হয়ে যাবে। এরা হলো চুতিয়া৷ এরা জনগনের শোষক। যাদেরকে খোদ রাষ্ট্রই নিয়োগ দেয় এবং দেখভাল করে।

আরেকটা বিষয় হলো: এনবিআর, কাস্টমস, এয়ারপোর্ট এসব জায়গার পিয়ন, চাপরাশি আর দালালেরাও কোটি টাকার মালিক। সরকারি অফিসের গাড়ী চালকরাও কোটিপতি হন কিভাবে?

সচিবালয়ের পিয়ন, ঢামেক ও এয়ারপোর্টের একাধিক ট্রলিম্যানকে আমি চিনি যাদের ঢাকায় ছয়তলা একাধিক বাড়ি রয়েছে। এর সবই করেছে ঘুষ দুর্নীতি আর চুরির টাকায়। অথচ এরা যা বেতন পায় তা দিয়ে জীবন কাটিয়ে মৃত্যুর পর কাফনের কাপড় কিনতে পেশনের টাকা ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকার কথা নয়। কিন্তু এরা মৃত্যুর আগে সমাজসেবকের খাতায়ও নাম লেখায়। নিজ এলাকায় মসজিদ, মাদ্রাসায় দান খয়রাতও করেন হাত খুলে।

এজন্যই এনবিআরের দুর্নীতিবাজরা উঠপড়ে লেগেছে সংস্কারগুলো ঠেকিয়ে দিতে। এরা জনগনেরটা খেয়ে জনগনকেই হুমকি দিচ্ছে। তবে সবাই যে খারাপ তা নয়। অনেক ভাল অফিসার/ কর্মচারীও আছেন। যারা আজীবন চাকুরী করার পর একটা টিনশেড বাড়িও বানাতে পারেন না।

গত ২০ বছর এরা ঘুমিয়ে ছিলেন৷ কারণ স্বার্থটা ঠিকঠাকই ছিল। এখন যেহেতু স্বার্থে টানা লেগেছে তাই সবাই এক সাথে ঘেউ ঘেউ করছে। এর সাথে যোগ দিয়েছে সুবিধাবাদী প্রাথমিকের শিক্ষকরাও। অথ গত ২০ বছর এদের কোন দাবি দাওয়া ছিল না। ফলে সরকারি অফিস, ব্যাংক, আদালত, এয়ারপোর্ট, চিটাগাং পোর্ট, কস্টমস, এনবিআর এবং প্রশাসনের মাথা সচিবালয়ে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, নোংরা রাজনীতি বন্ধ করতে হলে এখনই কঠোর হওয়ার কোন বিকল্প নাই। প্রয়োজনে এদেরকে চিহ্নিত করে তাৎক্ষণিক ছাটাই করা উচিত৷

লেখক : লেখক ও সিনিয়র সাংবাদিক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button