মত প্রকাশ

নীতিহীন অর্থনীতির গোলক ধাঁধাঁ

মানিক মুনতাসির : সরকারি সংস্থা বিবিএস বলছে, দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় নাকি এ যাবতকালের সর্বোচ্চ ২৮২০ মার্কিন ডলারে দাঁড়া্‌ইছে। যা বাংলাদেশী টাকায় ১২১ টাকা দরে, ৩৪১,২২০ টাকা। এর আগে সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয় ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরের ২ হাজার ৭৯৩ ডলার। আবার গত প্রায় তিন বছর যাবত মূল্যস্ফীতির চাপ প্রায় দুই অঙ্কের ঘরেই রয়েছে। অবশ্য গত মাসে সামান্য কমেছে। এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে কোটি মানুষ তাদের সঞ্চয় ভেঙ্গে খাওয়ার পর এখন ধার-দেনার জায়গাও শেষ করে ফেলেছে। আপনি/আমিও এই একই কাতারে রয়েছি।

এদিকে বিশ্বব্যাংক বলছে, গত নয় মাসে ২৭ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র সীমার নিচে নেমে গেছে। অর্থাৎ তাদের জীবন মান কমে গেছে। এমনিতেই তো এ দেশে আমরা নিকৃষ্ট মানের জীবন যাপন করি। কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করি চিকিৎসা পাই না। রাস্তায় বেরুলে শব্দদূষণের ঠেলায় বাঁচা দ্বায়। কোথাও কোন শৃঙ্খলা আগেও ছিল না এখনও নাই। খাবার দাবারের মধ্যে বিষ আর বিষ। এমনকি জীবন রক্ষাকারী ওষুধেও ভেজাল। শিশু খাদ্যেও বিষ। বনানী কিংবা গুলশানের মত জায়গার সিগনালে দাড়ালে মুহুর্তেই দুই দিক থেকে ভিক্ষুক হাত পাতে। ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা তো একেবারেই চাঙ্গে উঠছে। তারচেয়ে বেশি কষ্টে আছে সীমিত আয়ের মানুষ। যাদের ইনকাম একেবারেই ফিক্সট তারা তো ঠিকঠাক খেতেও পারছেন না। গত এক বছরে কার কত টাকা বেতন বেড়েছে সে তো সবারই জানা। তবে কৃষি উৎপাদন বেড়েছে ঠিক। শিল্প খাতে তো ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।

বিশ্বব্যাংক বলছে, বছর ২০২৫ শেষে অভ্যন্তরীন উৎপাদন (জিডিপি) নেমে আসবে ৪ এর নিচে। বৈশ্বিকভাবে গ্রহনীয় অর্থনীতির সরলতম সূত্র হলো মানুষের আয় বাড়লে জীবন মান বাড়বে। এবং এটা সারাবিশ্বে মেনে চলে। শুধু আমাদের আজ/সোনার দেশে ব্যতিক্রম। আয় বাড়ে মাগার জীবন মান কমে। মূল্যস্ফীতিও বাড়ে আবার জিডিপিও বাড়ে। অবশ্য এবার জিডিপি কমবে বলে ধারণা করছে বর্তমান সরকার।

চলতি অর্থবছরের শুরুতেই সরকার পরিবর্তনের দাবিতে উত্তাল ছিল সারাদেশ। অবরোধ, সংঘাত ও ইন্টারনেট বন্ধ রাখার ঘটনায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছিল, যার প্রভাব পড়ে অর্থনীনতিতে। যে কারণে অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয় মাত্র ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আগের বছর একই সময়ে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের মাত্র এক মাস বাজেট বাস্তবায়ন করতে পেরেছিল আওয়ামীলীগ সরকার। এরপর আগস্ট থেকে-চলতি মে পর্যন্ত প্রায় ১০ মাস অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষতায়। এ সময়ে তো আন্দোলন সংগ্রাম, অবরোধ, কলম বিরতি করেই কুল পায় না জনগন। তারপরও নাকি আয় বেড়েছে। তবে হ্যাঁ এখানে বড় একটা ইমপ্যাক্ট পড়েছে রেমিট্যোন্সের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বাংলাদেশ মোট ২১ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ১০ মাসে ২৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় হয়েছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৭ দশমিক ০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৪ এর পুরো বছরে দেশে এসেছে মোট প্রায় ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের বছরের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি।

চলতি মে মাসের প্রথম ২৪ দিনে এসেছে ২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার। এই হিসাবে গড়ে প্রতিদিন ৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলার (১ হাজার ১৪২ কোটি টাকা) দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের অবদান ৬ থেকে ৭ শতাংশ।

এদিকে ২০২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জার্নাল – এর এক প্রতিবেদনে বলা হয় বিশ্বে বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মীর সংখ্যা ১ কোটি ৫৫ লাখ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশি প্রবাসী সংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) তথ্যমতে বাংলাদেশী প্রবাসীদের সংখ্যা ১ কোটি ৪৮ লাখের বেশি। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রনালয়ের তথ্যমতে, বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যা ১ কোটি ৫৫ লাখ।
আমাদের পরিসংখ্যানগত গোঁজামিল অবশ্য নতুন কিছু নয়। বলা হয় আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ তারপরও প্রতি বছর প্রায় ৮০ লাখ টন খাদ্য আমদানি করতে হয়।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button