বিএসইসিতে ‘নারীর ক্ষমতায়নের জন্য অরেঞ্জ বন্ড উদ্যোগের উপর কর্মশালা’

মুক্তমন রিপোর্ট : বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর উদ্যোগে ২৮ এপ্রিল সোমবার ‘নারীর ক্ষমতায়নের জন্য অরেঞ্জ বন্ড উদ্যোগের উপর কর্মশালা’ অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ১০:০০ টায় বিএসইসি’র কমিশনার জনাব ফারজানা লালারুখ এর সভাপতিত্বে কর্মশালাটির সূচনা হয়। বিএসইসি’র চেয়ারম্যান জনাব খন্দকার রাশেদ মাকসুদ কর্মশালার উদ্বোধন করেন এবং প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। বিএসইসি’র মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত উক্ত কর্মশালায় বিএসইসি’র কর্মকর্তাবৃন্দ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক, ইউএনডিপি, আইএফসি বাংলাদেশ ও পুঁজিবাজারের ইস্যু ম্যানেজার প্রতিষ্ঠানসমূহসহ বন্ড বাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
বিএসইসি’র চেয়ারম্যান জনাব খন্দকার রাশেদ মাকসুদ কর্মশালা প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্যান্যের মধ্যে বলেন, অরেঞ্জ বন্ড আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক পুঁজিবাজার তৈরির সুযোগ করে দিচ্ছে যা দেশের নারীদের প্রান্তিক ও পরনির্ভরশীল অবস্থান থেকে উদ্যোক্তা কিংবা নেতৃত্বের অবস্থানে উন্নীত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। নারীর ক্ষমতায়ন কেবল একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা নয় – এটি একটি অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তা। বর্তমানে নারীরা দেশের শ্রমশক্তির প্রায় ৪১% হলেও, মাত্র ৬% নারীর আনুষ্ঠানিক অর্থায়নের সুযোগ রয়েছে। নারী ক্ষমতায়নের জন্য নারী-নেতৃত্বাধীন উদ্যোগগুলিতে অর্থায়ন নিশ্চিতকরণ ও বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অরেঞ্জ বন্ডকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ক্ষুদ্রঋণের জনক ও নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথিকৃৎ মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’ বা শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নেট কার্বন নির্গমন বিষয়ের যে ভিশন তার ক্ষেত্রে সেতু হিসেবে কাজ করতে পারে অরেঞ্জ বন্ড। তিনি কর্মশালার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং কর্মশালার সর্বাত্মক সাফল্য কামনা করেন।
বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ রেজাউল করিম কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। উক্ত প্রেজেন্টেশনে দেশের টেকসই বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের জন্য বিএসইসির গৃহীত উদ্যোগসমূহ ও ভবিষ্যত সম্ভাবনা, ইউএনডিপির সাথে বিএসইসি’র সমঝোতা স্মারক, দেশে অরেঞ্জ বন্ড এর সম্ভাবনা সম্পন্ন খাতসমূহ, অরেঞ্জ বন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্কসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। এছাড়াও কর্মশালায় ইউসিবি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জনাব তানজিম আলমগীরের সঞ্চালনায় একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত প্যানেল আলোচনায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জনাব একেএম সোহেল, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব জনাব কামরুল হক মারুফ, বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক জনাব মোস্তাফিজুর রহমান, ইউএনডিপি বাংলাদেশের প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট ড. মালিহা মোজাম্মেল, আইএফসি বাংলাদেশ এর ইএসজি অফিসার মিজ লোপা রহমান অংশগ্রহণ করেন। প্যানেল আলোচনায় দেশের বন্ড মার্কেটের নানাদিক নিয়ে আলোকপাত করা হয়। এছাড়াও কর্মশালায় একটি উন্মুক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেশের বন্ড মার্কেট এবং বিশেষত অরেঞ্জ বন্ড এর সুযোগ, সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে অংশগ্রহণকারীরা প্রশ্ন ও পরামর্শ প্রদান করেন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এছাড়াও ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট এক্সচেঞ্জ (IIX) এর প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশী আমেরিকান উদ্যোক্তা অধ্যাপক দুরীন শাহনাজ এর পক্ষ হতে ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট এক্সচেঞ্জ এর পরিচালক জনাব দেবাশীষ রায় ও লাইটক্যাসল পার্টনার্স এর সিইও জনাব বিজন ইসলাম কর্মশালায় অরেঞ্জ বন্ড ও বন্ড মার্কেটের বিভিন্ন প্রসঙ্গে আলোচনা করেন।
বিএসইসি’র কমিশনার জনাব ফারজানা লালারুখ উক্ত কর্মশালায় সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি অন্যান্যের মধ্যে বলেন, নারীরা দেশের জনগোষ্ঠীর অর্ধেক এবং তাদের দ্বারাই দেশের অর্ধেক অর্থনীতি ও কর্মশক্তি গঠিত। তাই নারীদের সাথে নিয়েই উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগোতে হবে এবং এক্ষেত্রে অরেঞ্জ বন্ড বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি এবং এখানে ইক্যুইটি ভিত্তিক পণ্যের পাশাপাশি আরো বিভিন্ন বৈচিত্রপূর্ণ পণ্য থাকা উচিত যা বাজারের বৈচিত্রায়ন করবে এবং বাজারকে আরো টেকসই রূপ দিবে। এক্ষেত্রে অরেঞ্জ বন্ড কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বাংলাদেশে বন্ড মার্কেটের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে নারী ক্ষমতায়ন ও পুঁজিবাজারের অগ্রগতি নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তা কামনা করেন।