স্ত্রীকে জোরপূর্বক নিয়ে গিয়ে আটকে রাখার অভিযোগ স্বামীর

রফিকুল ইসলাম রফিক, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দক্ষিণ মধুপুর এলাকার বাসিন্দা মোঃ আসাদুল ইসলাম তার স্ত্রীকে জোরপূর্বক আটকে রাখার অভিযোগ করেছেন একাধিক আত্মীয়ের বিরুদ্ধে। অভিযোগে তিনি দাবি করেন, তার স্ত্রীর খালা ও খালুর পূর্বপরিকল্পিত চক্রান্তের মাধ্যমে তাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আটকে রাখা হয়েছে এবং কোনো যোগাযোগ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
থানায় দায়ের করা লিখিত অভিযোগে আসাদুল ইসলাম জানান, প্রায় আড়াই বছর আগে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক তার বিয়ে হয় রংপুর জেলার হারাগাছ থানার কিশামত সরদারপাড়া এলাকার মোঃ নাজমুল হকের মেয়ে মোছাঃ নাজনিন আক্তারের সঙ্গে।
বিয়ের পর থেকে তাদের দাম্পত্য জীবন ছিল সুখ ও শান্তিতে পরিপূর্ণ। কিন্তু চলতি বছরের ৫ এপ্রিল, শনিবার বিকাল ৩টার দিকে তার শ্বশুর নাজমুল হকসহ কয়েকজন আত্মীয় বাড়িতে এসে বেড়ানোর কথা বলে নাজনিনকে নিয়ে যান। এরপর থেকে তাকে আর ফেরত দেওয়া হয়নি, বরং স্ত্রীর সঙ্গে যেকোনো ধরনের যোগাযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
“আমাদের সংসারে কোনো বিবাদ ছিল না। আমরা খুব শান্তিতে থাকতাম। কিন্তু আমার স্ত্রীর ছোট চাচা লাভলু মিয়া প্রায়ই বাড়িতে এসে অশ্লীল আচরণ করত। তার খালা ও খালু পরিকল্পিতভাবে তাকে নিয়ে গিয়ে এখন আটকে রেখেছে। আমি স্ত্রীর খোঁজ পাচ্ছি না, মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে গেলেও হুমকি দেওয়া হয়। আমি স্ত্রীকে ফিরে পেতে চাই।”
আসাদুল ইসলামের মা বলেন, “আমি তাকে নিজের মেয়ের মতো দেখতাম। আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের বিরোধ ছিল না। আমার বৌমার খালা ও খালুই তাকে নিয়ে গিয়ে চক্রান্ত করছে।”
আসাদুলের ভাবি ছুফিয়া বেগম বলেন, “আমাদের বাড়িতে তার সঙ্গে কারো কোনো ঝগড়া হয়নি। তবে তার ছোট চাচা লাভলু মিয়া, যিনি তার আপন চাচা, মেয়েটির সঙ্গে খারাপ আচরণ করত, গায়ে হাত দিত, খারাপভাবে তাকাত। এসব কথা সে মাঝে মাঝেই আমার সঙ্গে শেয়ার করত এবং বলত সে বাবার বাড়ি যেতে চায় না, কারণ ছোট চাচা ভালো না।”
স্থানীয় প্রবীণ নাগরিক এলাহি বকস বলেন, “মেয়েটি অত্যন্ত ভালো ছিল। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কও ভালো ছিল। আমরা কখনও তাদের মধ্যে কোনো সমস্যা দেখিনি। বরং শ্বশুরবাড়ির লোকজন এলে যথেষ্ট আপ্যায়ন করা হতো। এখন হঠাৎ করে মেয়েটিকে নিয়ে গিয়ে আটকিয়ে রাখা অমানবিক। যতটুকু শুনেছি, খালা-খালুর চক্রান্তেই এ সংসার ভাঙনের পথে।”
স্থানীয় মহিলা প্রতিনিধি শিমু আক্তার বলেন, “ঘটনার দিন মেয়েটির নানী, খালা ও খালু এসেছিল। তারা খুব সুন্দর কথা বলে মেয়েটিকে নিয়ে যায়। বলেছিল কয়েকদিন পর ফেরত পাঠাবে। কিন্তু দুই মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো যোগাযোগ নেই, মোবাইলগুলোও বন্ধ। অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ফলে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।”
উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিল্লুর রহমান বলেন, অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনায় এলাকার মানুষের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধনকে টিকিয়ে রাখতে এবং আসাদুল ইসলামের স্ত্রীকে ফেরত নিতে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসনের জোরালো হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।