অর্থ-বাণিজ্য

জমি-ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রিতে কমলো গেইন ট্যাক্স

আবাসনখাতে স্বস্তি ফেরার আশা

বিশেষ প্রতিনিধি : আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে জমি ও ফ্ল্যাট নিববন্ধন করহার কমিয়েছে অতর্বর্তীকালীন সরকার। বর্তমানে জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে অঞ্চলভেদে প্রায় ১৪ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশ হারে বিভিন্ন ধরণের কর ও ফি রয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন ফি ও কর বাবদ সরকারের মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১২ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে গেইন ট্যাক্স থেকে, যার পরিমাণ ৬ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা। বাজেটে গেইন ট্যাক্স ৩ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে সরকার। এতে করে আবাসন খাতে স্বস্তি ফেরার প্রত্যাশা করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা ও এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান। রবিবার বাজেট পাস সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে। তবে আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধন ফি কমানো হয়েছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে ঢাকার ক-ঘ শ্রেণীর ক্ষেত্রে উৎসে কর ৮ শতাংশ, এবং ঙ- শ্রেণীর ক্ষেত্রে এবং চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে ৬ শতাংশ উৎসে কর রয়েছে। নতুন অর্থবছর থেকে ঢাকার ক-ঘ শ্রেণীর ক্ষেত্রে উৎসে কর ৫ শতাংশ, এবং ঙ- শ্রেণী এবং চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ উৎসে কর আরোপ করা হতে পারে। অন্যান্য এলাকায় ৪% এর স্থলে ২% করা হয়েছে।

ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে বর্তমানে ১,৬০০ বর্গফুট পর্যন্ত ফ্ল্যাটে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ২ শতাংশ, এবং ১,৬০০ বর্গফুটের চেয়ে বেশি হলে ৪.৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। ১.৫% স্ট্যাম্প ফি, নিবন্ধন ফি ১% এবং ৩% স্থানীয় সরকার ফি রয়েছে।

রেজিস্ট্রেশন খরচ কমানোর বারবার দাবি জানিয়ে আসছে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) নেতৃবৃন্দ। সবশেষ গত ১৬ জুন, ২০২৫ তারিখে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এর সাথে সাক্ষাত করে রিহ্যাব নেতৃবৃন্দ পুনরায় এ দাবি জানান। রিহ্যাব এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অর্থ উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করে জোরালো ভাবে এই দাবি জানান। ওই সভায় উপস্থিতি ছিলেন রিহ্যাব এর ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফিন্যান্স) আব্দুর রাজ্জাকসহ বেশ কয়েকজন পরিচালক। ওই দিনের বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা তাদের কর কিছুটা কমানোর আশ্বাস দেন। সেই মিটিং এ রিহ্যাব এর দাবির প্রেক্ষিতে বাজেট ঘোষণার পর গেইন ট্যাক্স ৩শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়।

৩ শতাংশ গেইন ট্যাক্স কমিয়ে দেয়াতে সরকারকে ধন্যবাদ দিয়েছে বেশ কিছু আবাসন ব্যবসায়ী। তারা বলেন, নানা নেতিবাচক খবরের মধ্যে এটা একটা আশার খবর। বাড়তি কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করার যে সুযোগ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেওয়া হয়েছিল, তা বাতিল করে নতুন অর্থবছরের বাজেটে পাস করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। ফলে কালো টাকা সাদা করার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে দেশে আনার সুযোগ করে দিয়েছিল সরকার। যদিও কেউই এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিদেশ থেকে দেশে অর্থ ফেরত আনেননি। শেষ কয়েক বছরে বাজেটে রিয়েল এস্টেট এবং শেয়ারবাজারে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকলেও (শর্তযুক্ত) বিনিয়োগ ছিল অতি নগণ্য।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button