জাতীয়

জলঢাকায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসে সরকারি মালামাল লুট: মিঠু ও বাদলের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ তৎপরতা

বিশেষ প্রতিনিধি মোহাম্মদ জুবায়ের আলম নীলফামারী, জলঢাকাঃ জলঢাকা উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের গুদাম থেকে আনুমানিক ৩০ লাখ টাকা মূল্যের আরসিসি পাইপ লুটের ঘটনায় জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই লুটতরাজ সংঘটিত হয়েছে স্থানীয় দুর্ধর্ষ মিঠু ও বাদলের নেতৃত্বে, যাদের বিরুদ্ধে একাধিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, রাত আনুমানিক ১১টা ৩০ মিনিটে পাঁচটি ভ্যানে করে পাইপ সরিয়ে নেওয়ার সময় সাধারণ মানুষ বাধা দিলে, লুটেরা অস্ত্রের মুখে সবাইকে হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ঘটনার খবর পেয়ে জলঢাকা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরজু মো. সাজ্জাদ হোসেন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং দুটি ভ্যান মালামালসহ আটক করতে সক্ষম হন।

❖ লুটপাটের পেছনে ‘চাঁদাবাজি’ ও জিম্মি করার অভিযোগ

তদন্তে জানা যায়, লুট হওয়া পাইপগুলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কামাল এন্টারপ্রাইজের মালিকানাধীন, যা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের গুদামে সংরক্ষিত ছিল। অভিযুক্তরা প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার জুলফিকার আলীকে জিম্মি করে পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় নিজেরাই ভ্যান এনে পাইপ সরানোর চেষ্টা চালায়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জায়িদ ইমরুল মোজ্জাক্কিন বিষয়টি তদন্ত করে নিশ্চিত হন, মালামাল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হলেও সেটি সরকারি গোডাউন থেকে অনুমতি ছাড়াই রাতে সরানো হয়েছে, যা নীতিগতভাবে গুরুতর অপরাধ।

❖ বাদল-মিঠুর বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের মতে, এই লুটপাটের মূল হোতা হলেন:

১.মো. মনিরুজ্জামান মিঠু (পিতা: রফিকুল ইসলাম ভোম্বল, সাং: মাথাভাঙ্গা)

২.মো. আতাউর রহমান বাদল (পিতা: জোনাব আলী, সাং: বগুলাগাড়ি)

 

তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক সন্ত্রাস, হুমকি ও দখলবাজির অভিযোগ। বাদল নিজেকে কলেজ শিক্ষক পরিচয় দিলেও এলাকাবাসীর দাবি, সে মূলত প্রতারণা ও চাঁদাবাজির নেটওয়ার্ক চালায়।

❖ মামলা করতে ভয় পাচ্ছে ঠিকাদার, হুমকি অনলাইন সাংবাদিকদের

প্রতিষ্ঠানটির মালিক কামাল হোসেন ও তার পরিবার বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তারা এখনো থানায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানাতে সাহস পাচ্ছেন না। এদিকে বাদলের বাহিনী স্থানীয় সাংবাদিকদেরও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। ইতিমধ্যে একটি অনলাইন সংবাদপোর্টালে সংবাদ প্রকাশের পর তারা হুমকি দিয়েছে এক কোটি টাকার মানহানি মামলা দায়ের করার।

❖ পুলিশের ভাষ্য ও স্থানীয় ক্ষোভ

জানতে চাইলে ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, “ঘটনাস্থল থেকে পাইপ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে, তবে ঠিকাদার পক্ষ ভ্যান মালিকদের মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়েছে।”

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিসার আব্দুল গফুর বলেন, “এগুলো ঠিকাদারের পাইপ, তারা নিয়েছে। আমার কিছু করার নেই।”

তবে সাধারণ মানুষ বলছেন, “সরকারি গুদামে সংরক্ষিত মালামাল রাতের আঁধারে তুলে নেওয়া এবং অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তা সরিয়ে নেওয়া—এই অপরাধ সহজে ধামাচাপা দেওয়া চলবে না।”

❖ এলাকাবাসীর দাবি

জলঢাকায় এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও স্বাধীন তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, “এই ঘটনায় যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যতে আরও সরকারি অফিস এমন হামলার শিকার হবে।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button