ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু করতে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ

মুক্তমন রিপোর্ট : ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু করতে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করেছেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একজন আইনজীবি। ৪৪ বছর ধরে পরে পরিত্যক্ত থাকা বিমানবন্দরটি চালুর করার জন্য আইনী লড়াই শুরু করেছেন অ্যাডভোকেট মোঃ কামরুজ্জামান।
তিনি বলেন- “এই লড়াই চলবে যতক্ষণ পর্যন্ত বিমানবন্দরটি চালু না হয়। আমি সকারের প্রতি আইনী নোটিশ দিয়েছি। যদি একে কাজ না হয় তাহলে আমি নিজে পিটিশনার হয়ে রীট মামলা দায়ের করব।”
আইনী নোটিশটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে, অর্থ মন্ত্রণালয়ে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে, আইন মন্ত্রণালয়ে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে, বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষকে এবং ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের বরাবরে পাঠানো হয়।
লিগ্যাল নোটিশে সরকারকে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে যেসব বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করার জন্য বলা হয় সেগুলো হল- ১) ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু করতে কী কী প্রয়োজন, ২) বিমানবন্দরটি চালু না থাকার ফলে এই এলাকার ৪৫ লক্ষ মানুষ, ব্যবসা, বাণিজ্য ও উদ্যোক্তাদের উপর কিরূপ প্রভাব পড়ছে, ৩) নেপাল-ভুটান-বাংলাদেশ ক্রসবর্ডার বাণিজ্য-পর্যটনের সম্ভাব্যতা, এবং ৪) এই এলাকার ভৌগলিক কৌশলগত দিক বিবেচনায় এখানকার মানুষ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিমানবন্দরের সম্ভাব্য ব্যবহার বিষয়ে পতিবেদন প্রস্তুত ও প্রকাশ করা।
অ্যাড. কামরুজ্জামান বলেন- “অতীতে বিভিন্ন সময় সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা এই বিমাবন্দরটি চালুর কথা ফলাও করে প্রচার করলেও প্রকৃতপক্ষে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেন নি, দৃশ্যমান বা বাস্তব কোন পদক্ষেপ নেন নি।”
“ঠাকুরগাঁও বিমান বন্দরটি চালু না করার একটি অতি গোপনীয় কৌশলগত কারণ রয়েছে। সেটি হলো- আমাদের পার্শবর্তী দেশের অদৃশ্য হস্তক্ষেপ। এই কারণে কোন সরকারই বিমানবন্দরটি চালু করতে পারে নি। ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি ভারতের ‘চিকেননেক’ এর খুবই সন্নিকটে অবস্থিত এবং ভৌগলিক কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত। ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি চালু হলে এই এলাকায় ভারতীয় আধিপত্যের অবসান হবে। এই বিমানবন্দরটি বেসামরিক ও সামরিক উভয় কাজে ব্যবহৃত হওয়ার কার্যকারণ রয়েছে। বর্তমানে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের মধ্যে এই এলাকার মানুষের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব ব্যাপকভাবে হুমকির মধ্যে পড়েছে। এই এলাকার মানুষের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য হলেও বিমানবন্দরটি চালু করা একান্ত প্রয়োজন। ১৯৪০ সালে ব্রিটিশরা যখন এই বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠা করে তখন এটি বেসামরিক ও সামরিক উভয় কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল। বর্তমানেও এই বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠা করে তখন এটি বেসামরিক ও সামরিক উভয় কাজে ব্যবহার করার আবশ্যকতা রয়েছে।”
“বিমানযাত্রীর অভাবে বিমাবন্দরটি বন্ধ আছে বলে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এই যুক্তি সঠিক নয়। বর্তমানে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে বিমানযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সৈয়দপুর বিমাবন্দরের অধিকাংশ যাত্রী ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের। প্রতিদিন ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় থেকে প্রায় ৯০-১০০ জন যাত্রী বিমানে যাতায়াত করেন। ঠাকুরগাঁও থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দর প্রায় ১০০ কি.মি. দূরে, যেতে প্রায় ৩/৪ ঘন্টা সময় লাগে, সৈয়দপুর হয়ে বিমানে ঢাকায় যাওয়ার যেই সময়, খরচ ও কষ্ট হয় তাতে রেলওয়েতে যাওয়া অনেক সহজসাধ্য। ”
বর্তমানে হাজার হাজার ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোগ গড়ে উঠেছে। এই বিমানবন্দরটি ঠাকুরগাঁও সদর, রুহিয়া, শিবগঞ্জ, পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গি, হরিপুর, পঞ্চগড় সদর, দেবীগঞ্জ, বোদা, আটোয়ারী, তেঁতুলিয়া, দিনাজপুর ও নীলফামারীর কিছু এলাকার প্রায় ৪৫ লক্ষ মানুষের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে। বিমানবন্দরটির অভাবে এই এলাকায় ভারী শিল্প, কল-কারখানা গড়ে উঠছে না, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না, ৪৫ লক্ষ মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। বিমানবন্দরটি চালু হলে এই এলাকার উন্নতির জন্য আর কিছু লাগবে না।”