বৃহত্তর উত্তরা

চার দফা দাবিতে বৃহত্তর উত্তরার ওষুধ ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন

মুক্তমন রিপোর্ট : বাংলাদেশ কেমিস্টস্ এন্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতি কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ এর নির্দেশক্রমে সমগ্র বাংলাদেশের মানববন্ধন কর্মসূচি এর অংশ হিসেবে বৃহত্তর উত্তরার আট থানা ওষুধ ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

২২ মে বৃহস্পতিবার সকালে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হসপিটালের সামনে শতাধিক ফার্মেসি মালিকরা এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।

বাংলাদেশের ফার্মেসি মালিকরা একটি শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনের মাধ্যমে চারটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপন করেছেন, যা দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের সুষ্ঠু পরিচালনা ও জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত জরুরি। দাবিসমূহ গুলো হল ঃ

১. ঔষধ বিক্রয় কমিশন বৃদ্ধি : স্বাধীনতার পরবর্তীতে ফার্মেসিগুলোতে ওষুধ বিক্রয়ের উপর ০৫-১২% কমিশন প্রদান করা হয়, যা ফার্মেসি পরিচালনার ব্যয়ভার বহনে অপর্যাপ্ত। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো বছরে প্রায় ৩৫,০০০ কোটি টাকার বাবসা করে থাকে, যার একটি বড় অংশ ফার্মেসির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশে প্রায় ৪ লক্ষ ফার্মেসি রয়েছে, যেখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ কর্মসংস্থানে নিয়োজিত। এই পরিস্থিতিতে, কমিশন হার বৃদ্ধি না করলে ফার্মেসি মালিকদের জন্য বাবসা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

২. মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ দ্রুত ফেরত ও প্রতিস্থাপন :
২০১৯ সালের ১৮ জুন হাইকোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়, ফার্মেসিগুলোকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ৩০ দিনের মধ্যে উৎপাদনকারী বা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে ফেরত দিতে হবে। তবে বাস্তবে অনেক কোম্পানি এই নির্দেশনা মানছে না, ফলে ফার্মেসিগুলোতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ জমে থাকছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। উল্লেখযোগাভাবে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৩০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ ধ্বংস করা হয়েছে, এবং ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণের দায়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে প্রায় ৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে এবং ১,৪৩৭ টি মামলা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি যদি ফার্মেসী মালিকদের সাথে সমন্বয় করে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দ্রুত প্রতিস্থাপনের হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে নিয়ে কাজ করেন তাহলে ভোক্তা অধিকারসহ সরকারি কোনো সংস্থা কোন সচেতন মডেল ফার্মেসিতে এসে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ খুঁজে পাবে না।

৩. লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসিতে ঔষধ সরবরাহ বন্ধ:
বর্তমানে দেশে প্রায় ১.৫ লক্ষ ফার্মেসি লাইসেন্স ছাড়া পরিচালিত হচ্ছে যা দেশের মোট ফার্মেসির প্রায় অর্ধেক। এই ফার্মেসিগুলোতে প্রশিক্ষিত ফার্মাসিস্টের অভাব, ওষুধ সংরক্ষণের সঠিক ব্যবস্থা না থাকা এবং প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রির কারণে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই, লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসিগুলোতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করা এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি

৪. সব ওষুধের মূল্য সরকার কর্তৃক নির্ধারণ :
বর্তমানে বাংলাদেশে ১১৭টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম সরকার নির্ধারণ করে। তবে বাকি প্রায় ১,৫০০ কোম্পানির ৩০,০০০ ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম কোম্পানিগুলো নিজেরাই নির্ধারণ করে, যা বছরে একাধিকবার পরিবর্তিত হয়। এই পরিস্থিতিতে, ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং ভোক্তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সব ওষুধের মূল্য সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

মানববন্ধনের মাধ্যমে ফার্মেসি মালিকরা আশা করেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের দাবিগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে এবং দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। যদি আগামী ৩০ দিনের মধ্যে এই দাবিগুলোর বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়, তবে ফার্মেসি মালিকরা আরও কঠোর আন্দোলনের পথে যাবেন।
এ সময় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, মোঃ অলিউল্যাহ সভাপতি বিসিডিএস, বৃহত্তর উত্তরা শাখা, মিয়া সরিফুল ইসলাম সিনিয়র সহ সভাপতি, বিসিডিএস বৃহত্তর উত্তরা শাখা সহ বিভিন্ন ফার্মেসির মালিক ও কর্মচারী বৃন্দ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button