আগারগাঁও : মিজানের গরুর মাংস থেকে আপুদের কেক!

আগারগাও। খুব শীঘ্রই হতে যাচ্ছে সকল সরকারি অফিস এর সেন্ট্রাল হাব। প্রশস্ত রাস্তা এবং খোলা পরিবেশ। এই এলাকা এতো এতো অফিস কিন্তু নেই পর্যাপ্ত খাবারের সুবিধা। এরই মাঝে গড়ে উঠেছে অনেক ফুড কার্ট। আর গড়ে উঠেছিল গরীব রিক্সাওয়ালাদের জন্য সাবেক রিক্সা চালক মিজান ভাই এর উদ্যোগ “গরীবের বুফে ” ক্ষ্যাত মিজানের হোটেল।
“মিজান গরুর মাংস” বলতে ঢাকার আগারগাঁও তালতলায় “গরীবের বুফে” খ্যাত মিজান ভাইয়ের ১০০ টাকার বিনিময়ে গরুর মাংসসহ আনলিমিটেড ভাত ও তরকারি পরিবেশন করার কথা বোঝানো হয়েছে, যা তার উদারতা ও সততার জন্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। মিজান তার হোটেলে টাকার বিনিময়ে গ্রাহকদের উৎসাহিত করতেন না, বরং গ্রাহকরা নিজের ইচ্ছায় একটি পটে টাকা জমা দিতেন, যা তার সততা ও হৃদয়তার গল্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মিজানের হোটেল রাস্তার পাশের অন্যসব হোটেলের মতন ই। ১০০ টাকায় এক পিস গরুর মাংস আনলিমিটেড তরকারি আর ভাত ঠিক যেনো কলকাতার শিয়ালদাহ এর রাজু দা এর ২০ টাকায় ৩ টা পরোটটা আনলিমিটেড তরকারীর মতন। খেয়ে সবাই নিজ নিজ টাকা রেকেহ যেতো বক্সে। উদ্যোগ টা ছিল রাস্তার ধারের স্বল্প আয়ের মানুষ ও রিক্সাওয়া বা সি এন জি ওয়ালা দের মতন মানুষের জন্য। শান্তিতে করে যাচ্ছিলো বেচারা ব্যবসায়। কিন্তু বিধিবাম। মজার বিষয় হলো, ChatGPT & Gemini ও এখন “মিজান গরুর মাংস” চেনে। ট্রাস্ট না হলে সার্চ করে দেখুন।
প্রথমে ফেসবুকে কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা করলো ভাইরাল। একে একে ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক সব জায়গায় ছড়িয়ে গেলো তার ভিডিও। সবাই তার ভিডিও করে করে কামানো শুরু করলো ডলার। অথচ এই লোক টাকে প্রথমে কেউ হেল্প করলো না। হঠাত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর দের ওভার মার্কেটিং এর ফলে হলো চাদাবাজী আর তার হোটেল ভাংচুর। তারপর তা আবার ভাইরাল হলো। এবার আর থামায় কে। আবার ইউটিউবার ভাই রা তাকে এমন ভাইরাল করলো যে, যেই মিজান ১০ কেজি গরুর মাংস দিনে বিক্রি করতো এখন তার ৮০-১০০ কেজি লাগে দিনে। এতো এতো ভীড় যে আসলে দাড়ানোর জায়গা নাই। আর সবচেয়ে বড়ো কথা যেই রাস্তার ধারের স্বল্প আয়ের মানুষ ও রিক্সাওয়া বা সি এন জি ওয়ালা দের মতন মানুষের জন্য যেই উদ্যোগ টি নিয়েছিলো এখন তারাই ওখানে যেয়ে খেতে হিমশিম খায়। এতো ভীড়। মিজানের হোটেলে খাওয়াটাকে বানিয়ে ফেলে হয়েছে সৌখিনতা। মিজান এর ও কষ্ট হচ্ছে। কেউ কেউ টাকা না দিয়ে চলে যেতে চায়, কেউ একাধিক মাংস নেয়, কারো কাছে টেস্ট লাগে না, কারো কাছে জুসি লাগে না, টেন্ডার লাগে না, খাবার নষ্ট হচ্ছে। মানুষ ভীড়ের ভয়ে বেশি খাবার একসাথে নিয়ে খাবার নষ্ট করছে। পাশে আরো একাধিক দোকান চালু হয়ে গেলো। অন্য দোকানীরা এই ভীড় এর ওপর নাখোশ।
আরেক শুরু হলো কেক নিয়ে। আগারগাও এ একজন বসা শুরু করলো। ইউটিউবার রা গেলো, দেখলো, ভাইরাল করলো। বেচাকেনা বাড়লো। দাড়ানোর জায়গা নাই এখন। আর এর মধ্যে এখন আরো ২-৩ ডজন টেবিল নিয়ে কেক বানিয়ে বসে গেছে। না আছে কোয়ালিটি না আছে মান। এক্টাই কোয়ালিটি, ঘরে নিজের হাতে বানানো। ব্যাপার টা এমন না যে সবাই বাজে কেক বানাচ্ছে। কিন্তু ব্যাপার হলো কেউ প্রপার হাইজিন মেইন টেইন করছে না অতি লাভের আশায়। এই জিনিস বানাতে যে বি এস টি আই এর অনুমোদন লাগে সেটা ও জানে না কেউ। যা তা অবস্থা। এখন তো দৈনিক কাইজা লেগে যায়। তাও বসার জায়গা নিয়ে। সরকারী রাস্তায় এরা বসে, কিন্তু সবাই নিজের জায়গায় বানিয়ে ফেলেছে সেটিকে। একে তো সেই জায়গাতে মানুষ দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না ইউটিউবার কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের কারণে তার মধ্যে আবার প্রতিনিয়তই জায়গা নিয়ে ঝগড়া লাগতেছে। এমনকি প্রথমদিকে যে ব্যক্তি বসত সেখানে এখন বাকিরা ওই একই জায়গায় বসতে চাই দেখে ইউটিউব এরাও তাদেরকে মানা করে যেই জায়গাটা সেই ভাইয়ের আপনি বা আপনি বসতেছেন কেন আপনি বইসেন না উনাকে দেন। মানে এমনিতেই সরকারি জায়গা স্বাভাবিকভাবে যে যখন আগে আসবে সেই জায়গাতে বসতেই পারে এটা তো কারো লেখা সম্পত্তি না। সোজা কথা অবৈধ। আর সবাই বলতেছে কষ্ট করে ব্যবসা করতেছে হালাল ব্যবসা করতেছি। আরে ভাই শুরুটাই তো করতেছেন অবৈধ জায়গায়, শুরুটাই তো হারাম হিসেবে হয়ে গেল। এখন প্রতিনিয়ত সেখানে জায়গা এবং বসা নিয়ে কোথায় বসালো, আগের দিন কে কোথায় বসছে। এই জায়গা না অই জায়গায় এগুলা নিয়ে ঝগড়াঝাটি চলতেছে।
একদিন ভোক্তা অধিকার গিয়ে এগুলারে একটা ডলা দেক, সব সোজা হয়ে যাবে।