মত প্রকাশ

‘পেশাদার সাংবাদিকদের’ নিরাপত্তায় ‘হলুদ সাংবাদিকদের’ গোড়া উপড়ে ফেলতে হবে

সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি :

সব সাংবাদিকই কি সাহসী কলম সৈনিক হয়? সবাই কি তার লেখনীর দ্বারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে, নির্যাতিত- নিপিরীত মানুষের অধিকার আদায় করতে কলম ধরে? না, অসংখ্য সাংবাদিক সমাজের অন্যায়কারী ও চিহ্নিত অপরাধীদের পক্ষ নিয়ে উল্টো তোষামোদি ও তেলবাজি করে সংবাদ প্রকাশ করে। শুধু তাই নয়, নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে সেইসব চিহ্নিত অপরাধীদের আরও শক্তিশালী করতে তারা সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন অখ্যাত পত্রিকার কার্ড দিয়ে একেবারে নিজেদের দলে ভিরিয়ে নেন। আর মূল সমস্যাটা শুরু হয় এখান থেকেই। শুধুমাত্র ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থের উদ্দেশ্য নিয়ে সাংবাদিকতায় আসা অপরাধী এবং অযোগ্য লোকগুলো যখন সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে কার্ডধারী সাংবাদিক হিসেবে সংবাদ জগতে প্রবেশ করেন, তখন পেশাদার সাংবাদিকরা পরেন বিপাকে! যেদেশে ১টা বেনসন সিগারেট, রাস্তার ধারের টং দোকানের ১ কাপ ধোয়া উঠা গরম চা আর মোবাইলে ৫০ টাকা রিচার্জ করে দিলে একজন কার্ডধারী বা হলুদ সাংবাদিক আরেকজন পেশাদার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তাকে অপরাধী বানিয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে পারে, সেদেশে পেশাদার সাংবাদিকদের অবস্থা গাজীপুরের আসাদুজ্জামান তুহিনের মত হওয়া আশ্চর্য্যের কিছু নয়।

একদিকে পেশাদার সাংবাদিকরা সমাজের অন্যায়, দুর্নীতি এবং ভুল কাজের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে, তারা সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করে, বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সরকারকে সহযোগিতা করে এবং উন্নয়নমূলক কাজে মানুষকে উৎসাহিত করে।

অন্যদিকে, সমাজের চিহ্নিত অপরাধী বা অপরাধীদের বন্ধু তথা হলুদ সাংবাদিকরা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন এবং ব্যক্তিগত বিদ্বেষ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে সংবাদ পরিবেশন করেন। ধরুন- যে অপরাধের তথ্য তুলে ধরে একজন পেশাদার সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশ করছেন, সেই একই অপরাধীদের পক্ষ নিয়ে আরেকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করছেন অপেশাদার বা অপরাধীদের বন্ধু নামের হলুদ সাংবাদিকরা। যার ফলে এখান থেকেই সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়। কিছু হলুদ সাংবাদিক ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য ভিত্তিহীন ও মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে, যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর। তারা বস্তুনিষ্ঠতা ও পেশাদারিত্বের অভাবের কারণে সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে না, উল্টো সমাজের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠে।

এই ধরনের ব্যক্তিরা সাংবাদিকতার আড়ালে তাদের মূল পেশা- চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, ব্ল্যাকমেইলিং, মাদক ব্যবসা সহ অন্যান্য অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত থাকে। তাদের এই ধরণের কার্যকলাপ সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করে সাংবাদিকদের ভাবমূর্তি নিয়ে। এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সাংবাদিকদের নৈতিকতা ও পেশাদারিত্বের উপর জোর দেওয়া উচিত। সেই সাথে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আর এই কাজে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে স্থানীয় প্রেসক্লাব থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনগুলো। সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাদের দায়বদ্ধতা থেকে এই দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করলেই সারা দেশে সাংবাদিকতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদেরকে এই মহান পেশা থেকে বিতাড়িত করা সম্ভব এবং ‘হলুদ সাংবাদিকতা’ নামক কলঙ্ক থেকে সাংবাদিকতাকে মুক্ত করা সম্ভব।

লেখক- সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button