আইন-অপরাধবৃহত্তর উত্তরা
‘ইঞ্জিনিয়ার স্বামী পরকীয়া প্রেমিকাসহ ডাক্তার স্ত্রীর হাতে ধরা’

নুরুল আমিন হাসান, (ঢাকা):
রাজধানীর উত্তরায় শাহাদাৎ হোসেন নামের একজন ইঞ্জিনিয়ারকে পরকীয়া প্রেমিকা পারমিতার সঙ্গে হাতে নাতে ধরেছেন তারই ডাক্তার স্ত্রী শান্তনা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদেরকে শান্ত করেন।
উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন কেএফসি রেস্টুরেন্টে রোববার (১৮ মে) দুপুর আড়াইটার দিকে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
পরে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ বিষয়টি অবগত করে ওই রেস্টুরেন্টটির একজন নারী স্টাফ। তারপর উত্তরা পূর্ব থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আরশাদুল হক সঙ্গীয় ফোর্সসহ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। সেই সাথে উভয় পক্ষকে থানায় এসে আলোচনার কথা বলেন।
ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাৎ হোসেনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা। বর্তমানে ওই ইঞ্জিনিয়ার উত্তরখানের মাদারবাড়ি মধ্যপাড়া এলালায় মা, স্ত্রী ও এক শিশু ছেলে সন্তান নিয়ে বসবাস করেন।
পরবর্তীতে ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাৎ হোসেন, তার স্ত্রী ডা. শান্তনা, তার মা ও পরকীয়া প্রেমে অভিযুক্ত নারী পারমিতা বিকেল ২টা ৫০ মিনিটে উত্তরা পূর্ব থানায় আসেন।
সরেজমিনে উত্তরা পূর্ব থানায় গিয়ে দেখা যায়, দুই পক্ষের সবাই থানার নিচতলার নারী ও শিশু হেল্প ডেক্সের রুমের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ করছেন। তাদের উচ্চস্বরে চিল্লাচিল্লির কারণে পুলিশও বিরক্ত হয়ে যায়। তারপর তাদেরকে বার বার বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা চালায় পুলিশ।
ওই সময় ডা. শান্তনা উচ্চ স্বরে পারমিতাকে বলেন- তুমি জানতানা শাহাদাৎ ম্যারিড। উত্তরে পারমিতা বলেন- আমি সত্যি জানতাম না। আবার শান্তনা বলেন- তুমি তোমার গ্রুপের সবার কাছে ছড়িয়ে দিয়েছো, শাহাদাৎ তোমাকে ফোন করে। উত্তরে পারমিতা বলে- আমি এমন কিছুই করি নাই। উচ্চস্বরে এমন নানান কথা, নোংরা ভাষা এবং ঝগড়া বিবাদের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে থানায় কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা।
এ বিষয়ে ডা. শান্তনা বলেন, ‘আমি কয়েক মাস ধরে পরকীয়ার বিষয়টি টের পেয়েছি। কিন্তু বুঝতে পারি নি। পরে আজ ওই হিন্দু মহিলাকে (পারমিতা) হাতে নাতে আমার স্বামীর সাথে ধরেছি।’
তিনি বলেন, ‘পারমিতা একটি বায়িং হাউজে চাকরি করে। আমার হাজবেন্ড (স্বামী) একটি বেসরকারি কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার। পারমিতার বিবাহিতা। তার স্বামী বিদেশে থাকে। তার সন্তানও রয়েছে। পারমিতার সন্তান ও আমাদের সন্তান একই স্কুলে পড়ে। সেখান থেকেই শাহাদাৎ হোসেনের সাথে তার পরিচয় ও পরকীয়া প্রেম।’ ডা. শান্তনার অভিযোগ, পারমিতা শুধু আমার স্বামীর সাথে নয়, একাধিক ছেলের সাথে ঘুরে।’
শাহাদাৎ হোসেনের মায়ের অভিযোগ, ‘পারমিতার স্বামী বিদেশ থাকে। সে অনেক ছেলের সাথে, পুরুষদের সাথে ঘুরে বেড়াই, ঘুরে খায়। আট হাজার টাকা বেতনে বাচ্চাকে স্কুলে পড়ায়। আর এসব ব্যবসা করে। তার ব্যবসায়-ই এটা। এগুলো করে পয়সা ইনকাম করে। সে আমাদের সংসার নষ্ট করে দিচ্ছে।’
অপরদিকে পারমিতা বলেন, ‘আমার মেয়ে এবং ওনার (শাহাদাৎ) সন্তান স্কলাস্টিকা স্কুলে এক সাথেই প্লে’তে পড়ে। সেই সুবাধেই আমাদের পরিচয়। ওনার (শাহাদাৎ) ওয়াইফের সাথে মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে যথা সম্ভব আমাকে নিয়ে। ওনার (শান্তনা) হাজবেন্ড সম্ভবত অন্য কারো সাথে কথা বলছে, সেটা নিয়ে তিনি আমাকে ভুল বুঝেছেন।’
এ বিষয়ে উত্তরা পূর্ব থানার এএসআই আরশাদুল হক বলেন, ‘আমরা থানায় নিয়ে আসি নাই। তারা নিজেরাই আসছে। ওখানে জগড়া করতেছিল। তারপর কেএফসি রেস্টুরেন্টের একজন নারী স্টাফ ৯৯৯ ফোন দিলে আমি সেখানে যাই।’
তিনি বলেন, ‘পরে আমি বলেছি- আপনাদের যদি কোন কথা থাকে, থানায় এসে স্যারের সাথে কথা বলতে পারেন। পরে আমি যাওয়ার পর তারা থানায় এসেছে। তারপর মাথা ঠান্ডা হয়েছে, চলে গেছে।’
উত্তরা পূর্ব থানায় অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘আপনাকে (প্রতিবেদকে) এখানে ডাকছে কেউ? এখানে সবাই এডাল্ট (প্রাপ্ত বয়স্ক)। আপনাকে ডাকতে হবে, তারপর আসতে হবে।’
বিকেল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে উত্তরা পূর্ব থানা থেকে প্রথমে পারমিতা চলে যান। তারপর ঢাকা মেট্রো গ-১৩-০৫৮০ নম্বরের একটি সাদা প্রাইভেটকারে শাহাদাৎ হোসেন যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠেন। ওই সময় তার স্ত্রী ডা. শান্তনা বাধা দিলেও অফিসের কাজের কথা বলে চলে যান শাহাদাৎ। পরবর্তীতে শাহাদাৎ হোসেনের মা ও তার স্ত্রীও চলে যান। তবে দুই পক্ষের কেউ কোন অভিযোগ করেন নি বলে জানিয়েছে থানা পুলিশ।