পাওনা টাকা চাওয়ায় সাংবাদিকের ওপর কসাই পারভেজের ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের হামলা

বিশেষ প্রতিনিধি : রাজধানীর উত্তরখানে পাওনা টাকা চাওয়ায় আজকের পত্রিকার সাংবাদিক নুরুল আমিন হাসানের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে কসাই পারভেজের ভাড়াটে গোন্ডারা।
উত্তরখানে মাজারের কসাই পারভেজের ‘পারভেজ গোশত বিতানে’ নামের দোকানে শুক্রবার (৪ জুলাই) ভোর রাতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। প্রাণে বাঁচতে ভুক্তভোগী সাংবাদিক পাশের একটি খাবার হোটেলে আশ্রয় নিলে সেটিও ঘেরাও করে সন্ত্রাসীরা।
পরে জাতীয় জরুরী সেবা ‘৯৯৯’ এর মাধ্যমে উত্তরখান থানা পুলিশ ও র্যাব-১ এর একটি টহল টিম আহত অবস্থায় সাংবাদিক হাসানকে উদ্ধার করে। সেই সাথে ঘটনাস্থল থেকে হামলাকারী ও কসাই পারভেজের ছোট ভাই জাহিদকে আটক করলেও ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। এদিকে হাসানকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় এলাকার লোকজন।
এ বিষয়ে আহত সাংবাদিক নুরুল আমিন হাসান বলেন, ‘উত্তরখান মাজারের কসাই পারভেজের কাছে আমি ব্যবসায়ীক টাকা পাই। টাকা না দিয়ে বন্ধ রেখে ডিভোর্স দেওয়া দ্বিতীয় বউ নিয়ে পালিয়েছে সে। গভীর রাতে দোকান খোলার খবর পেয়ে আমি গিয়ে পারভজের ছোট ভাই, পারভেজের ভাড়াটে গুন্ডা বাহিনীর রকি, জানু ও আরো কয়েকজনকে দেখতে পাই। তখন জাহিদের কাছে পারভেজ ও টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ওরা সবাই মিলে ঠেলে ধাক্কিয়ে চিপায় নিয়ে আমার উপর হামলা করে। হামলাকালে আমার গলার চেইন, টাকা-বিভিন্ন কার্ডসহ ম্যানিবাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তারপর ধউর দিয়ে পাশের দোকানে আশ্রয় নিলে দোকানটি ঘেরাও করে গুন্ডারা। অতঃপর ৯৯৯ এ কল দিলে থানা পুলিশ ও র্যাবের লোকজন গিয়ে আমাকে উদ্ধার করে। সেই সাথে হামলাকারীদের মধ্যে জাহিদ নামের একজনকে আটক করে।’
তিনি বলেন, ‘২০২২ সালের ৯ জুলাই কুরবানির ঈদের আগের দিন ২ দিনের জন্য ধার চেয়ে তিন লাখ টাকা নেয়। পরে এক মাস ঘুরিয়ে টাকা না দিয়ে আমাকে দলিল করে ব্যবসায়ীক পার্টনার বানায়। পার্টনার বানানোর পরও সে সহজে কোন হিসাব নিকাশ দিতে চায় না। যার কারণে দু’মাস পরেই তার সঙ্গে ব্যবসা করতে চাই না, পাওনা টাকা ফেরত চাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘দেই দিচ্ছি, আজ না কাল, এসব বলে এতদিন কাল ক্ষেপন করে আসছিল। সেই সাথে ব্যবসার তার মন গড়া হিসাব দিয়ে আসছিল। সেটাও এক মাস দিলে দুই মাস দেয় না, এমন। সর্বশেষ ডিসেম্বরে/২৪ থেকে অদ্যাবধি কোন হিসাব নিকাশ দেয় নি। অতঃপর বহুবারের মত গত গত ১৫ মার্চ সমুদয় টাকা পরিশোধ করার তারিখ দেয়। গেলে আগের মতই দেই দিচ্ছি বলে ঘুরাতে থাকে। তারপর ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিন (গত ২ এপ্রিল) টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেয়। তখন টাকার জন্য গেলে আবারও বেশ কিছু দিন ঘুরায়। গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত ঘুরানোর পর ৯ এপ্রিল টাকা চাইলে আমাকে টাকা না দিয়ে উল্টো মেরে ফেলার হুমকি দেয় কসাই পারভেজ ও তার ছোট ভাই জাহিদ। অতঃপর ওই দিনই মামলার জন্য আমি উত্তরখান থানায় প্রমাণসহ একটি লিখিত অভিযোগ দেই।’
সাংবাদিক হাসান বলেন, ‘অভিযোগের পর থানা পুলিশের মধ্যস্থতায় টাকার দেওয়ার তারিখ দেয় পারভেজ। সেই তারিখও পার হলে পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয় বিএনপি পারভেজের বাবা জাকির ও বড় ভাই জহির জিম্মা নিয়ে পারভেজের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার তারিখ দেয়। তবুও টাকা দেয়নি। অতঃপর দেড় মাস ধরে দোকানপাট বন্ধ করে তার ছেড়ে দেওয়া (ডিভোর্স) ছোট বউ নিয়ে পালিয়ে যায় পারভেজ। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে দোকান খোলার খবর পেয়ে যাওয়ার মাত্রই আমার ওপর পারভেজের ছোট ভাই জাহিদ ও তার ভাড়াটে গুন্ডা রকি, জানুসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহ নিয়ে হামলা করে। হামলাকারী জাহিদকে ঘটনাস্থলে প্রথমে পুলিশ আটক করলেও পরে তাকে রহস্যজনক এক ফোনের কারণে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।’
হাসান বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি মামলার জন্য উত্তরখান থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। সেই সাথে হামলাকারীদের দৃষ্টান্ত মূলত শাস্তি দাবি করি।’
ঘটনাস্থলে যাওয়া উত্তরখান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) টি এম আল আমিন বলেন, ‘সিনিয়র স্যারের নির্দেশে জাহিদকে থানায় নেওয়া সম্ভব হয় নি। স্যার বলছেন, হামলা হলে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর মামলা হলে তারপর আসামী গ্রেপ্তার করা হবে।’