পশ্চিমা গণমাধ্যমে ইসলামভীতি ছড়ানোর প্রভাব শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

মুক্তমন রিপোর্ট : বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি) কর্তৃক আয়োজিত পশ্চিমা গণমাধ্যমে ইসলামভীতির বয়ান ও মুসলিমদের ওপর এর প্রভাব শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৮ জুলাই, শুক্রবার, বিকালে বিআইআইটি’র কনফারেন্স হলে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাজ্যের লিভারপুল হোপ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক খন্দকার কবির উদ্দিন।
সেমিনারে কীনোট স্পিকার হিসেবে অধ্যাপক কবির উদ্দিন বলেন, ইসলামোফোবিয়া আজ পশ্চিমা বিশ্বে একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংস্কৃতিক বিদ্বেষের রূপ নিয়েছে, যেখানে ইসলামী পরিভাষা ও ধর্মীয় চিহ্নগুলোকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সহিংসতা, সন্ত্রাসবাদ, পশ্চাদপদতা ও জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ত ও একাকার করে বিশ্বব্যাপী উপস্থাপন করা হচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্বের গণমাধ্যমে ‘আল্লাহু আকবর’ বা ‘জিহাদ’ শব্দগুলোকে প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা ছাড়াই নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়, যা মুসলমানদের পরিচিতি ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাবের তীব্রতার কারণেই ইসলাম ও মুসলমানদের উপস্থাপনের ভাষা ও কৌশল প্রায়শই নেতিবাচক ও একপাক্ষিক।
বক্তব্যে তিনি ডিসকোর্স অ্যানালাইসিস পদ্ধতির মাধ্যমে দেখান, কীভাবে সংবাদ প্রতিবেদনে ভাষার ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বিভ্রান্তিকর অর্থ আরোপ করা হয় এবং তা পাঠকের মানসিকতায় প্রভাব ফেলে। তিনি বলেন, এই মনোভাব শুধু মুসলিমদের নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলে না, বরং পশ্চিমা সমাজে বসবাসরত মুসলিমদের মানসিক স্বাস্থ্য, ধর্মীয় পরিচিতি ও সামাজিক অংশগ্রহণকেও ব্যাহত করে। এই ব্যাপারে পর্যাপ্ত গবেষণা এখনো হয়নি এবং এ বিষয়ে নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখতে সক্ষম এমন গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানো, সঠিক ভাষা ও প্রতীক ব্যবহারের প্রতি সংবেদনশীলতা বজায় রাখা এবং মুসলিমদের নেতিবাচক চিত্রায়নের পরিবর্তে ভারসাম্যপূর্ণ উপস্থাপনার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি আরও বলেন, ইসলামভীতি ছড়ানো সামাজিক মনস্তত্ত্বেও গভীরভাবে প্রোথিত হচ্ছে। প্রোপাগাণ্ডার কারণে মুসলিমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে; শত্রুতা ও ঘৃণা বাড়াচ্ছে এবং সহনশীলতার সংকট দেখা দিচ্ছে। এর ফলে মুসলিম অভিবাসী, নারী, শিশু ও শিক্ষার্থীরা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিক হয়ে পড়ছে। মিথ্যা ও ভুয়া সংবাদের কারণে মুসলিমদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং বৈশ্বিক শান্তি ও সহাবস্থানের ধারনাকেও চ্যালেঞ্জ করছে। মুসলমানদের প্রতি অযৌক্তিক ভয় তৈরির এ ধরনের বয়ানের পাল্টা বয়ান তৈরি করতে হবে। ইসলাম ধর্মের উদারতা ও শাশ্বত সৌন্দর্য তুলে ধরতে গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতা, আন্তঃধর্মীয় সংলাপ বৃদ্ধি, বৈচিত্র্যের মর্যাদা এবং মুসলিমদের ইতিবাচক অবদানকে তুলে ধরার উদ্যোগ প্রয়োজন।
এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, নীতি-পর্যায়ের হস্তক্ষেপ এবং একাডেমিক চর্চাও অত্যন্ত জরুরি। যারা ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক গোঁড়ামির কারণে মুসলমানদের ভূ-রাজনৈতিক হুমকি বা সন্ত্রাসবাদের উৎস হিসেবে চিহ্নিত করে- তাদের প্রকৃত সত্য উপস্থাপন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইআইটি’র মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবদুল আজিজ। আলোচনায় অংশ নেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. শাহজাহান খান, নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহা. হাছানাত আলী, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির অধ্যাপক ড. শামসুদ্দীন আহমেদ, বিআইআইটির নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর লুৎফুল কবীর সাদী ও ড. সৈয়দ শহীদ আহমেদ। বিভিন্ন পেশাজীবী, তরুণ চিন্তক, লেখক, গবেষক ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীবৃন্দসহ অংশগ্রহণকারীরা যুক্ত ছিলেন।