২২ হাজার কোটি টাকার তৃতীয় টার্মিনালে বড় ধাক্কা


মুক্তমন রিপোর্ট : ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহুল আলোচিত তৃতীয় টার্মিনালের সিলিং ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কারণ, টার্মিনালের মূল নকশায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার জন্য কোনো অবকাঠামোই রাখা হয়নি। ফলে পুরো টার্মিনালটি কার্যত নেটওয়ার্কবিহীন হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়ে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, টার্মিনালের কাজ প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পর ভেতরে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকার বিষয়টি ধরা পড়ে। চেক-ইন কাউন্টার, ইমিগ্রেশন, লাউঞ্জ, লাগেজ বেল্টসহ প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ হলেও যাত্রীরা ভেতরে ঢুকলে মোবাইল ফোনে কোনো নেটওয়ার্ক পাচ্ছেন না।
একবিংশ শতাব্দীর একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সুবিধা না থাকা কার্যক্রম শুরুর ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বিষয়টি নিয়ে গত বছরের নভেম্বর মাসে বেবিচকের জরুরি বোর্ড সভায় আলোচনা হয়। সভায় সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, সিলিং না ভাঙলে নেটওয়ার্ক বসানোর কোনো বাস্তবসম্মত বিকল্প নেই।
নকশাগত ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন
বিশ্বখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিনের নকশায় এবং জাপানি অর্থায়নে নির্মিত এই মেগা প্রকল্পে এমন মৌলিক ঘাটতি কীভাবে থেকে গেল—তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, নকশা প্রণয়নের সময় মোবাইল অপারেটরদের প্রযুক্তিগত চাহিদা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
টেলিটকের ওপর দায়িত্ব
সমাধান খুঁজতে মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করে বেবিচক। গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক জানায়, তারা কেবল জায়গার ভাড়া দিতে আগ্রহী, রাজস্ব ভাগাভাগিতে নয়। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর টেলিটককে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
চূড়ান্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী, টেলিটক সিলিং ভেঙে নেটওয়ার্ক স্থাপন করবে এবং অন্য অপারেটরদের যুক্ত করবে। এ বিষয়ে বেবিচকের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে পাঁচ বছরের একটি চুক্তি হতে যাচ্ছে, যেখানে আয়ের একটি অংশ বেবিচক পাবে।
ব্যয় ও উদ্বোধন নিয়ে শঙ্কা
সিলিং ভাঙা ও পুনর্নির্মাণে টার্মিনালের মূল নান্দনিকতা ও ফিনিশিং ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি এতে অতিরিক্ত কয়েক কোটি টাকা ব্যয় হবে, যা আসবে সরকারি তহবিল থেকে।
এ কারণে নির্বাচন-পূর্ব উদ্বোধনের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা পিছিয়ে যেতে পারে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বড় প্রশ্ন রয়ে গেল
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল ও ভবিষ্যৎ ভূগর্ভস্থ রেলপথের সঙ্গে সংযুক্ত এই আধুনিক টার্মিনালকে দেশের গর্ব হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছিল। তবে এত বড় প্রকল্পে একটি মৌলিক প্রযুক্তিগত বিষয় উপেক্ষিত থাকায় পরিকল্পনা ও তদারকির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলিং মেরামত করা সম্ভব হলেও পরিকল্পনার এই ঘাটতি জনআস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
২২ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে আজ সিলিং ভাঙছে।
আগামীতে আস্থা ভাঙবে কি না—সেই প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা।



