অভিবাসী দমনে ‘স্বৈরাচারী’ হয়ে উঠছেন ট্রাম্প
লস অ্যাঞ্জেলেসে টানা ৫ দিন ধরে বিক্ষোভ, গ্রেফতার ২৩৭

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নিয়ে বরাবরই কঠোর অবস্থান নিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতার মসনদে বসার পর থেকেই এ বিষয়ে নেওয়া তার পদক্ষেপের কারণে বহুবার সমালোচনার মুখেও পড়েছেন তিনি। বরাবরই এসব উপেক্ষা করে নিজের নীতিতেই অটল থেকেছেন ট্রাম্প। এবার অতীতের সব একগুয়েমির মাত্রা ছাড়িয়ে নিজের অভিবাসী বিদ্বেষ প্রতিষ্ঠায় রীতিমতো স্বৈরাচীর পথে হাঁটলেন ট্রাম্প। তার অভিবাসন হঠানো নীতিতে ইতিমধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশটির ‘অভিবাসী রাজ্য’ হিসাবে পরিচিত ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস শহর। যার ঢেউ আছড়ে পড়ছে পুরো দেশজুড়েই। শুক্রবার শুরু হওয়া এ বিক্ষোভ লস অ্যাঞ্জেলেসে এখন সহিংস সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে।
মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা ৫ দিন ধরেই চলছে এ বিক্ষোভ, ধরপাকড়। এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে শহরে প্রায় ৪,০০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েনের মতো বিতর্কিত পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। এখানেই শেষ নয়- ৭০০ মেরিন সেনা মোতায়েনেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একের পর এক এমন সিদ্ধান্তকে ‘স্বৈরাচারী পদক্ষেপ’ বলে নিন্দা করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম। বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান।
সোমবার নিউসম জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন লস অ্যাঞ্জেলেসে আরও ২,০০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করেছেন। এর আগেও ২,০০০ সেনা মোতায়েন করেছেন তিনি। তাদের মধ্যে ১৭০০ সেনা লস অ্যাঞ্জেলেসে পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ১৯৬৫ সালের পর প্রথমবার কোনো প্রেসিডেন্ট রাজ্যের গভর্নরের অনুমতি না নিয়েই ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করলেন। গভর্নরের মতামত ছাড়াই লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন গভর্নর নিউসম।
ক্যালিফোর্নিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এই পদক্ষেপকে অবৈধ বলে বিবেচনা করছে। তারা অভিযোগ করেছেন, এই মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান লঙ্ঘন করছে এবং ফেডারেল সরকারের ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছে।
সোমবার সান ফ্রান্সিসকোর ফেডারেল আদালতে করা মামলায় ডোনাল্ড ট্রাম্প, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এবং প্রতিরক্ষা বিভাগকে বিবাদী করা হয়েছে। মামলার অভিযোগপত্র পর্যালোচনা করে ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বন্টা বলেছেন, ‘ট্রাম্পের সেনা মোতায়েনের পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে রাজ্যের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করেছে। তাই ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে বেআইনি ঘোষণা করতে আদালতকে অনুরোধ করা হবে। সে সঙ্গে বিক্ষোভ দমনে সেনা মোতায়েনের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হবে।’
এদিকে অভিবাসীদের ধরপাকড়ের প্রতিবাদে মঙ্গলবার পঞ্চম দিনেও লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভ হয়েছে। যা টেক্সাসসহ বোস্টন, হিউস্টন এবং ফিলাডেলফিয়া শহরেও ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া স্থানীয় সময় মঙ্গলবার নিউ ইয়র্ক, শিকাগো ডালাস, আটলান্টাতেও বিক্ষোভ হওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে বিক্ষোভে ৬০০টিরও বেশি রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। শুক্রবার বিক্ষোভ শুরুর পরপরই একটি কর্মস্থল থেকে ৪৪ জন অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই দিনে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে আরও ৭৭ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর, লুটপাট, সহিংসতা এবং অন্যান্য অভিযোগ আনা হয়েছে।
শনিবার রাতে বিক্ষোভে ছত্রভঙ্গ করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বিভাগ ২৯ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করে। এছাড়া রোববার পুলিশের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অন্যান্য অপরাধের অভিযোগে শহরের কেন্দ্র থেকে আরও ২৭ জনকে আটক করা হয়েছে। এ দিন সান ফ্রান্সিসকোতে আরও ৬০ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন বাস বলেছেন, ফেডারেল সরকার তার শহরটিকে একটি ‘পরীক্ষামূলক ক্ষেত্র’ হিসাবে ব্যবহার করছে। যেখানে তারা স্থানীয় ও রাজ্য সরকারের ক্ষমতা নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ক্যারেন উল্লেখ করেছেন, গত সপ্তাহে ইমিগ্রেশন কাস্টমস অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) অভিযান শুরু হওয়ার আগে শহর শান্তিপূর্ণ ছিল। আইসিই অভিযানের ফলে শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে, এমনকি বৈধ বসবাসকারীদের মধ্যেও, ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে ইমিগ্রেশন কাস্টমস অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) অভিযান শুরু করলে এর প্রতিবাদে শহরজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। এরপর আন্দোলন রূপ নেয় সহিংসতায়। ট্রাম্প ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তার প্রশাসনের অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর প্রচেষ্টা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সংঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।