আইন-অপরাধবৃহত্তর উত্তরা

উত্তরখানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নেতার ওপর কৃষকদল নেতার হামলা, আহত ৬ 

নুরুল আমিন হাসান, (ঢাকা):

রাজধানীর উত্তরখানে অটোরিকশার ধাক্কাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে দ্বন্দ্ব। পরে ফেসবুক পোস্টে হুমকি। তারপর ফোন দিয়ে ডেকে নিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উত্তরখানের আহ্বায়ক আব্দুর রহমান নাবিল বেপারী (২৪) ও তার সহযোগীদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে কৃষক দল নেতা হাজী মো. মোহন ও তার ছেলেদের উপর।
উত্তরখানের হেলাল মার্কেট চেয়ারম্যান বাড়ির হাজী মো. মোহনের বাড়িতে শনিবার (২৪ মে) বিকেল সাড়ে ৩টায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলায় আহতরা হলেন, উত্তরখান থানার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুল রহমান নাবিল বেপারী (২৪), তার সহযোগী ছাত্র আল আমিন সরকার (২০), মো. জিসান (২০), মো. আরিফিন ওরফে আসিফ (১৮), মো. জিহাদ (১৯) ও বিপুল হোসেন (২১)।
আহতদের মধ্যে নাবিলের বাম হাতের বাহু ও ডান হাতের তালুতে রক্তাক্তের জখম, আল আমিনের মাথার পিছনে, কপালে, হাতে ও গালে রক্তাক্ত জখম রয়েছে, জিসানের মাথার পিছনে ও ডান হাতের তালুতে জখম, আরিফিন ওরফে আসিফের মাথার পিছনে ও কোমড়ে জখম রয়েছে।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) উত্তরখান মাজার এলাকায় একটি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা আমাদের ছোট ভাইকে চাপা দেয়। পরে ছোট ভাই আকাশ বিষয়টি মিমাংসার জন্য যান। সেখানে উতরখান থানা কৃষক দলের সভাপতি হাজী মোহনের বড় ছেলে আরিফিন মোহন গিয়ে দলীয় পদ পদবীর জোর দেখিয়ে উচ্চ্য বাচ্চ্য ও তর্ক বিতর্ক করে। তখন বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররাও প্রতিবাদ করে।
এর জের ধরে আরিফিন মোহনের ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল মামুন শুক্রবার (২৩ মে) তার ফেসবুক পোস্টে হুমকি ধমকি দিয়ে একটি পোস্ট করে।
ওই পোস্টে লেখা ছিল- এলাকার ভেতরে ছাত্র সাইজা যারা হেডাম দেখাবে, বড় ভাইদের সাথে বেদবি করবে, তাদেরকে কুত্তার মত পেটানো হবে। লেংটা করে পেটানো পেটানো হবে।…  একদম ইজ্জতে হাত দিলি, তরে খাইছি।
এ পোস্টকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে এর বিচার না হলে উত্তরখান থানা ঘেরাওয়ের হুমকি দেয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা। পরে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিষয়টি সমাধান করা হয়।
উত্তরখান থানার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রহমান নাবিল বেপারী বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার মাজারে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কৃষকদলের সভাপতি হাজী মোহনের ছেলে আরিফিনের সাথে আমাদের তর্ক বিতর্ক হয়। পরে তার ছোট ভাই আব্দুল্লাহ ফেসবুকে ছবিসহ পোস্ট দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। অতঃপর পুলিশের সহযোগীতায় মিমাংসা হয়।’
তিনি বলেন, “শুক্রবার সকালে আকাশ ও সাইফের সামনে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় আরিফিন। তারপর আজ (শনিবার) দুপুরে আমার চাচা রানা বেপারীকে আব্দুল্লাহ ফোন দিয়ে বলে- ‘নাবিল আমার বড় ভাইকে ফোন দেয় কে, ও কি হয়ে গেছে, ওর সাহস কত বড়, আমার ভাইকে ফোন দেয়। ওরে দেখে নিব।সাহস থাকলে বাসায় আসেন’ ।”
নাবিল বলেন, ‘পরে আমরা ছাত্ররা তার বাসায় গিয়ে হাজী মোহন আঙ্কেলকে আব্দুল্লাহকে ডাকার জন্য বলি। তখন হাজী মোহন আঙ্কেল, তার দুই ছেলে আরিফিন ও আব্দুল্লাহ, মেয়ে মনি ও আশেপাশের ৩৫/৪০ জন আমাদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ নিয়ে হামলা চালায়। এতে আমিসহ আমাদের ৮ জন যোদ্ধা আহত হই।’
নাবিল অভিযোগ করে বলেন- হামলাকালে আরিফিনের কোমড়ে একটি পুরাতন জং (মরিচা) ধরা পিস্তল ছিল। ওই পিস্তল দেখিয়ে গত ৫ আগস্টের পর ইউনিট আওয়ামীলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলামকের পরিবারকে ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকার চেক নিয়ে গিয়েছলো। ওই সময় পুলিশের কার্যক্রম সক্রিয় না থাকায় আমরা জানতে পেরে চেকটি উদ্ধার করে তাদেরকে দিয়ে দেই। সেই থেকেই আমাদের উপর তাদের ক্ষোভ ছিল।
অপরদিকে উত্তরখান থানা কৃষক দলের সভাপতি হাজী মো. মোহন বলেন, ‘ওরা (নাবিলরা) একটা নেটের লাইন চালায়। আমার পোলারাও চালায়। আমাদের দু-একশ লাইন আছে। ওরা আমাদের নেটের লাইন কেটে। আবার দুই দিন পরও কেটে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। আবার দুই দিন আগে আমার বড় ছেলের মাজার রোডে অপমান অপদস্থ করছে। এ নিয়ে ছোড (ছোট) পোলায় ফেসবুকে পোস্ট দিছে।’
তিনি বলেন, ‘তারপর ওরা থানায় বলছে, আমায় জানাইছে। তারপর আমি ছোট ছেলেরে ধমক দিছি পরে ও কেটে দিছে।’
হাজী মোহন বলেন, ‘এলাকায় আমাদের নেটের লাইন থাকতে পারবে না বলে হুমকি ধামকি দিছে। পরে নাবিলে চাচা জাহাঙ্গীর ব্যাপারীকে বিষয়টি আমি জানাইছি। তারা তারা লাঠিসোটা সহ পোলাপান নিয়ে এসে আমাদের বাসায় এসে মারামারি শুরু করছে।’
এদিকে মারামারি খবর পেয়ে ডিএমপ’র দক্ষিণখান জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) আরিফ, জেষ্ঠ্য সহকারী কমিশনার (এসি) নাসিম এ গুলশান, উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
অপরদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের অপর হামলার ঘটনার খবর পেয়ে উত্তখান ও উত্তরার ছাত্ররা উত্তরখান থানায় বিচারের দাবিতে এসে জড়ো হয়েছেন।
এ বিষয়ে উত্তরখান থানার ওসি জিয়াউর রহমান বলেন, ‘হামলার ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ‘হেলাল মার্কেটের রানা বেপারীর বাড়িতে হাজী মোহনদের একটি নেটের লাইন ছিল। সেই লাইনটি বিচ্ছিন্ন করে আরেকটি লাইন সংযোগ দেয় নাবিলরা। পরে হাজী মোহনরা রানা বেপারীকে ফোন দিয়ে বলে- তোরা রাস্তার এ পাশে আসবি না। আসলে খবর আছে। আর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button