কিংফিশার বারে হানি ট্র্যাপ, মারধর করে টাকা পয়সা লুটের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃরাজধানীর উত্তরার কিংফিশার বারের বিরুদ্ধে মেয়ে দিয়ে হানি ট্রাপে ফেলে মারধর করে দুই ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা লুটের অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযোগটি মিথ্যা বলে দাবি বার বারটির ম্যানেজারের।
উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের জমজম টাওয়ার সংলগ্ন কিংফিশার বারে শনিবার (৪ অক্টোবর) রাতে এ ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে রাত পৌনে ১০টায় উত্তরা পশ্চিম থানায় এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীদের একজন।
ওই ভুক্তভোগীরা হলেন, নরসিংদী সদরের পুরাতন বাস স্ট্যান্ড হাসপাতাল গেট এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে আশিকুর রহমান রাফি ও তার ভাই মো. সামির।
রাত ৯টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেট্রো থ-১৬-১২২২ নম্বরের একটি সিএনজিতে করে উত্তরা পশ্চিম থানা গেটে আসেন রাফি ও সামির নামের দুই ভাই। এসময় সামিকে সিএনজির ভেতরেই অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। অপরদিকে রাফিকে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে করতে উত্তরা পশ্চিম গেটে প্রবেশ করতে দেখা যায়। তখন রাফি পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন- আমাদেরকে বাঁচান, আমার ভাইকে ওরা অর্ধেক মেরে ফেলেছে। আমাকেও মারধর করছে। পরে আমরা কোন রকম সিএনজিতে করে থানায় আসছি। স্যার, ওদেরকে ধরেন।
কি হয়েছে জানতে চাইলে আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা যমুনা ফিউচার পার্ক থেকে মোবাইল কিনে উত্তরা আসছি। পরে আমাদের প্রচন্ড ক্ষুদা ও পিপাসা লাগায় আমরা জমজম টাওয়ারের পাশে সিএনজি থেকে নেমে তেহেরি খুঁজতেছিলাম। ওই সময় কিংফিশার বারের একটি মেয়ে তাদের ওখানে খাবার আছে বলে নিয়ে ভেতরে ঢুকায়।’
রাফি অভিযোগ করে বলেন, ‘ভেতরে ঢুকার পর বারের লোকজন আমাদের দুই ভাইকে মেয়ের লোভ দেখায়। তারপর আমাদেরকে দুই ভাইয়ের দুই পাশে মেয়ে বসিয়ে কোকের সাথে কি যেন মিশিয়ে খাওয়ায়ে দেয়। খাওয়ার পর কেমন যেন লাগছিল, তখন খেতে না চাইলেও তারা জোর করে আমাদেরকে খাওয়ায়। এক পর্যায়ে আমার ভাই অসুস্থ হয়ে পরে। তখন তারা আমাদেরকে মারধর করে পকেটে থাকা টাকা পয়সা ও বিকাশ থেকে টাকা তুলে নিয়ে নেয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কোক খেতে না চাইলেও বারের মেয়েরা আমাদেরকে জোর করে খাওয়াইছে। বেরিয়ে আসতে চাইলেও দেয় নি। তারা আমাদেরকে মারধর করে যা টাকা পয়সা ছিল, সব রেখে দিছে। আমার পকেটে থাকা ১৫/১৬ হাজার টাকা, বিকাশে থাকা সব টাকা তারা মারধর করে রেখে দিয়েছে। পরে আমরা কোন রকম দৌড়ে বের হয়ে একটি সিএনজি নিয়ে থানায় আসছি।’ বলতে বলতেই তিনি দাঁড়ানো অবস্থা থেকে এবং চেয়ারে বসা অবস্থা থেকে কয়েকবার ফ্লোরে পরে যান।
এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার সার্ভিস ডেলিভারি অফিসার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) নাজমুল বলেন, ‘তারা দুই জনই অসুস্থ অবস্থায় ছিল। তাই আমরা তাদেরকে আগে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে এসে অভিযোগ দিতে বলেছি। পরে যে সিএনজি দিয়ে তারা এসেছিল, ওই সিএনজিতে করেই চলে গেছেন।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে কিংফিশার বারের গেটে গিয়েও কারও কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি। জানা যায়, বারটির মালিক মুক্তার হোসেন মালয়েশিয়া রয়েছেন। পরবর্তীতে আজ রোববার (৫ অক্টোবর) বারটির ম্যানেজার মাসুদ আল আল আজিমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তারা দুই ভাই ফ্যাট (মোটা) এসেছিল। এখানে তারা ড্রাংক (মাতাল) হয়ে গিয়েছিল। পরে একজনকে আমরা হুইল চেয়ারে করে নামিয়েছি, আরেকজন হেঁটেই নেমেছে। তারপর তাদেরকে সিএনজিতে করে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
হানি ট্রাপ, মারধর ও টাকা পয়সার লুট করার বিষয়ে আজিম বলেন, ‘তাদেরকে মারধরও করা হয় নাই। তাদের কাছ থেকে কোন টাকা পয়সাও নেওয়া হয় নাই।’
এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে উত্তরা পশ্চিম থানার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এখানে অপরাধ দুই পক্ষেরই। এক পক্ষ ড্রিংকস করে অপরাধ করেছে, আরেক পক্ষ মারধর করে এবং টাকা পয়টা লুট করে করেছে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’