ঢাকা ১৮ আসনে জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন বাতিল দাবিতে মশাল মিছিল


বিশেষ প্রতিনিধি : রাজনৈতিক জল ঘোলা পরিস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। সেই রেশই দেখা গেল ঢাকা ১৮ আসনে। গতকাল ৪ ডিসেম্বর বিএনপির নতুন ঘোষণায় মনোনয়ন পান ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন। এরপরই উত্তরায় বিএনপির রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যায়। মনোনয়ন বঞ্চিতরা ফেসবুক স্ট্যাটাসে অসন্তোষ প্রকাশ করতে থাকেন। তাতেই যেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ লেগে গেল। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে জাহাঙ্গীর বিরোধী বিএনপির ঐক্য প্যানেলের পক্ষে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা মশাল মিছিল করেছে।
মিছিলে মনোনয়ন বাতিল চেয়ে শ্লোগানসহ ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব হাজী মোস্তফা জামানকে বঞ্চিত করায় ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। কয়েকশ নেতা-কর্মীর মিছিলটি আজমপুর, হাউজবিল্ডিং হয়ে মহাসড়ক ঘুরে শেষ হয়। তবে হঠাৎ করেই মশাল মিছিলকে দেখে জনমনে আতংক তৈরী হয়। বিশেষ করে মহাসড়কে গাড়ি ও সড়কে চলাচলকারী মানুষজন আতংকিত হয়ে ছোটাছুটিও করতে দেখা গেছে।
মিছিলে অংশগ্রহণকারী কর্মীরা বলেন, অতীতে দেখা গেছে যে দলের মহানগর সদস্য সচিবকে সবসময় মনোনয়ন পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু এবার ষড়যন্ত্র করে তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তাছাড়া এসএম জাহাঙ্গীর ছাড়াও আরো কয়েকজন যুগ্ম আহ্বায়ক রয়েছেন তাদেরকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। এ সময় তারা শ্লোগানে জাহাঙ্গীর হোসেন ও তার অনুসারীদের চাঁদাবাজ অভিহিত করে বিক্ষোভ করতে থাকে।
এদিকে হঠাৎ করে মশাল মিছিল হওয়ায় সর্বত্র আতংক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা বলছেন যে, আগ থেকেই বিএনপির মধ্যে কোন্দলের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। বিগত কয়েক সপ্তাহে পাল্টাপাল্টি সভা সমাবেশেও সেগুলোর লক্ষণ মিলেছে। একে অপরের প্রতি আক্রমণাত্মক ভাবে বক্তব্য বিবৃতি দিয়েছেন। যা বিএনপির ঐক্যের ফাঁটলকে স্পস্ট করেছিল। এবার এই রকম বিধ্বংসী বিক্ষোভ কর্মসূচী আগামীতে দুই পক্ষের মধ্যে নিশ্চিত সংঘাতের আভাস দিচ্ছে।
স্থানীয় মুরুব্বী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি গত ৩ নভেম্বর ১ম দফায় মনোনয়ন ঘোষণার পর উত্তরার বিএনপি কার্যত দুই ভাগ হয়ে যায়। এক ভাগে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব হাজী মোস্তফা জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক এম. কফিল উদ্দিন আহমেদ, মো: আফাজ উদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন ও দক্ষিণখান থানা আহ্বায়ক হেলাল তালুকদারসহ স্থানীয়রা একতাবদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম নামে একটি আলাদা মোর্চা গঠন করেন এস এম জাহাঙ্গীরকে ঠেকাতে। দুই গ্রুপই এরই মধ্যে আলাদাভাবে শোডাউন করেন উত্তরায়। এসব শোডাউনেও কারিশমা দেখান এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন।
তার সেই শোডাউনের পর বিএনপির রাজনৈতিক কার্যক্রম খন্ড খন্ড হয়ে যায়। আর বিষয়টি টের পেয়ে দলীয় হাইকমান্ড জরুরী বৈঠকে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সামনে আনে। বিএনপি আন্তঃকোন্দল ঠেকিয়ে এই আসনকে জয়ের ধারায় আনতে সকল প্রার্থীদের কার্যক্রম, মাঠের অবস্থান, রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড এবং বিগত ও সাম্প্রতিক সময়ে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে উঠে আসা নানা অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে।
বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলন শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাপ্তাহিক মুক্তমনকে বলেন, “আমরা আসলে যাচাই করার জন্য সময় নিয়েছিলাম। তাই সবশেষ যে রিপোর্ট পেয়েছি সে অনুযায়িই দল সিদ্ধান্ত দিয়েছে “ নতুন ৩৬ জনের জন্য সিদ্ধান্ত ফের পরিবর্তন হয়ে যাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এবার যাদের নাম এসেছে তাদের পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ তারা কঠিন বাছাইয়ে পাস করেছে।”
এর আগে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি দ্বিতীয় ধাপে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও ৩৬ জন প্রার্থীর নাম প্রকাশ করেন। এর আগে ঘোষিত ২৩৭ জনসহ মোট প্রার্থী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭৩ জনে।
নতুন তালিকায় ঢাকা- ১৮ আসনের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন। তার মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই এলাকায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে।
মনোনয়ন পেয়েই দৌড়ে হাজী মোস্তফা জামানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন। সে সময় হাজী মোস্তফা গণমাধ্যমের সামনেই দলীয় সিদ্ধান্তকে স্বাগত না জানালেও তার বাইরে যাবেন না বলে মন্তব্য করেন। এস এম জাহাঙ্গীর ও তার সঙ্গে একসঙ্গে বসে ছবি তুলেন এবং নির্বাচনে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে সকলের সহযোগীতা চান।
কিন্তু তারপরই ঐক্য প্যানেলের অন্যতম সদস্য মো. আফাজ উদ্দিন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক স্ট্যাটাসে নিজের ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, “সকলে ধৈর্য্য ধারণ করুন,সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে ইনশাআল্লাহ।” ধারণা করা হচ্ছে তার এই স্ট্যাসাসের পরই পুরো বিষয়টিকে প্রভাবিত করেছে।
এদিকে মশাল মিছিল বিষয়ে জানতে চাইলে এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন সাপ্তাহিক মুক্তমনকে বলেন, আমি মনে করি এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমাদের বিএনপি পরিবারের কেউ জড়িত নয়। যারা দলকে ভালোবাসে, তারেক রহমানকে ভালোবাসে, খালেদা জিয়াকে ভালোবাসে তারা এ ধরনের কার্যক্রম করতে পারে না। এটাতো পার্টির ডিসিশন। কেউ কারো মনোনয়ন ছিনিয়ে নেয়নি। আমরা যারা পার্টি করি ডিসিশন মানতে হবে। আমি আশা করবো যদি বিএনপি নামের কেউ জড়িত থাকে তাহলে সে ফিরে আসবে। দলের চেইন অব কমান্ড মেনে তারা রাজনীতিটা করবে এটা আমি বিশ্বাস করি।

অপরদিকে এ বিষয়ে হাজী মোস্তফা জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কেউ ফোন ধরেন নি। একইভাবে অপর যুগ্ম আহ্বায়ক এম. কফিল উদ্দিন আহমেদ, মো: আফাজ উদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন তারা কেউই ফোন ধরেন নি। রহস্যময় স্ট্যাটাস নিয়ে জানার চেষ্টা করা হয় আফাজ উদ্দিনের জন্য। তবে তিনিও ফোন ধরেননি বা কারো কাছে প্রকাশ্য হয়ে মন্তব্য দিতে চাননি। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি ঐক্য প্যানেলের অপর কোন নেতা-কর্মীরা। তবে পরিস্থিতি বলছে নির্বাচনের আগে এ ধরনের প্রকাশ্য বিরোধীতা উত্তরায় দলের জন্য অশনি সংকেত হয়ে দেখা দিতে পারে।



