আইন-অপরাধবৃহত্তর উত্তরা

দক্ষিণখানে রাস্তায় প্রকাশ্যে স্ত্রীকে গলা কেটে খুন, স্বামীকে গণধোলাই

নুরুল আমিন হাসান, (ঢাকা):
রাজধানীর দক্ষিণখানে রাস্তার উপর প্রকাশ্যে শিল্পী বেগম (২৫) নামের এক নারীকে গলা কেটে খুন করেছে এক পাষণ্ড স্বামী মো. তুহিন (৩২)। এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতা গণধোলাই দিয়ে স্বামীকে পুলিশ হস্তান্তর করেছে।
দক্ষিণখানের শাহ কবীর মাজার রোডের চালাবন এলাকায় মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেল ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ওই নারী দক্ষিণখানের চালাবন এলাকার ওলিও এ্যাপারেলস লি. নামের একটি পোষাক কারখানায় জুনিয়র অপারেটর হিসাবে কাজ করতেন। তিনি হলেন, জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার জয়নগর গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে তুহিনের স্ত্রী শিল্পী।
বর্তমানে দক্ষিণখানের চালাবন এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন তুহিন ও শিল্পী দম্পতি। তাদের সংসারের জান্নাত (৭) নামের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
শিল্পী ভোলা জেলার দুলাল হাট উপজেলার আবুবাকেরপুর গ্রামের দুলাল মিয়ার মেয়ে। শিল্পীর বাবা মা উত্তরখানের ফজির বাতান এলাকায় থাকেন।
হত্যাকান্ডের সময় পুরো ঘটনাটি দেখেছেন ঘটনাস্থলের পাশের একটি মসলার দোকানদার কামাল শেখ। তিনি বলেন, ‘আমি মাত্র দোকানে এসে দোকান গুছাচ্ছিলাম। তখন দেখি এক যুবক এক নারীকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। সাথে সাথেই তার শরীরে পারা দিয়ে ধরে হাতে থাকা দা দিয়ে গলায় পর পর দুটি কোপ দিয়েছে। একটি কোপে প্রথমে কিছুটা কেটে গেছে। দ্বিতীয় কোপে তার মাথা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।’
কামাল বলেন, ‘ওই সময় আমি ফেরাতে যাওয়ার চেষ্টা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার হাতে ধারালো দা থাকার কারণে পারি নি। আর ঘটনার সময় চায়ের দোকানের আরেক লোক ছিল। তিনিও সাহস পান নি।’
তিনি বলেন, ‘হত্যার পর ওই যুবকটি কোথাও পালিয়ে যায় নি। লাশের পাশে ঘুরতেছিল। আর বলতেছিল- এই মেয়েটা আমার জীবন শেষ করে দিয়েছে। আমার সব শেষ করে দিয়েছে। আর চার পাঁচ মিনিট লাশের আশেপাশে ঘুরছে। তারপর থানা রোডে দিকে যাচ্ছিলো। ওই সময় আশেপাশের ছাত্র ও লোকজন তাকে ধরে গণধোলাই দেয়। এদিকে ঘটনাস্থলেই ওই নারী মারা যায়। তখন তার লাশের পাশে ফেলে রেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।’
হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. মহিদুল ইসলাম, দক্ষিণখান জোনের জেষ্ঠ্য সহকারী কমিশনার (এসি) মো. নাসিম এ গুলশান, দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাইফুর রহমান মির্জা’সহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সেই সাথে আশেপাশের লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ঘটনাস্থল থেকে ক্রাইম সিন ও আলামত সংগ্রহ করেছে। এছাড়াও হত্যাকান্ডের ব্যবহৃত দা’টিও জব্দ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি- পদোন্নতি প্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘স্ত্রীকে হত্যাকান্ডের ঘটনায় আমরা ঘাতক স্বামীকে গ্রেপ্তার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি। সেই সাথে নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সেই সাথে হত্যাকান্ডের আসল রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button