মত প্রকাশ

পাথর নিয়ে ভারতের খেলা

আবু বকর সিদ্দিক :

ভোলাগঞ্জের পাথর নিয়ে কিছু একটা লিখতে চেয়েও অনেকে বারবার থেমে যাচ্ছে ভয়ে। হুজুগে মাতা আবেগি জনতার রোষানলে পড়ার ভয়ে।

আমার পরিচিত যতজনকেই গতকাল ভোলাগঞ্জের পাথর নিয়ে স্ট্যাটাস দিতে দেখেছি আমি শিউর তারা ভোলাগঞ্জ যাওয়ার পুরো রাস্তায় চোখ বন্ধ করে থেকে সাদা পাথরে পৌঁছে তবেই চোখ খুলেছিলেন।

কোম্পানিগঞ্জের পথে পথে অগনিত পাথর কোয়ারির কঙ্কাল দাঁড়িয়ে আছে, একসময়ের প্রাণচঞ্চল জনপথের প্রতিটা বাজার একাকীত্ব নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে টিকে আছে, এলাকা কর্মক্ষম পুরুষশূন্য হয়ে গেছে। একটা অর্থনৈতিক কর্মাঞ্চল যে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে তা তারা দেখতে পাননি।

২০১৬ সালের পূর্বে এসব কোয়ারিতে পাথর ক্রাশ করা হত। বাংলাদেশ থেকে সেই পাথরই তামাবিল হয়ে মেঘালয় আসাম ত্রিপুরাতে রপ্তানি হত।

ভারতের জন্যে ঐতিহাসিক দুর্ভাগ্য ছিল এই ভোলাগঞ্জ জাফলং হাতছাড়া হওয়া। মেঘালয়ের পাহাড় থেকে স্রোতের সাথে গড়িয়ে আসা পাথর সারি ও ডাউকি নদী হয়ে এসে থামতো এই ভোলাগঞ্জ জাফলংয়ে।

এই অঞ্চলে সেই পাথর উত্তোলনের ফলে ভারত তার অংশে পাথর জমা রাখতে পারতো না। যার কারনে তার পাহাড়ের পাথরই তাকে আবার বাংলাদেশ থেকে কিনে নিতে হত।

ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরির র মেটারিয়ালস ছিলো এই পাথর।। অনেকে হয়তো জানে না সিলেটের এই সিমেন্ট ফেক্টরিতে বিশ্বের অন্যতম সেরা সিমেন্ট উৎপাদন হতো।। পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দিয়ে এই কারখানাটাকেই অচল বানিয়ে দেয়া হইছে।

পরিবেশ রক্ষার নামে পাথর উত্তোলন বন্ধ করার পর ভারত তার অংশে পাথর জমা করার সুযোগ পায়। সেখানে সে শত শত কোয়ারি স্থাপন করে। বাংলাদেশের কোয়ারি বন্ধ করিয়ে ভারত বছরে গড়ে ৫০০-৭০০ মিলিয়ন ডলারের ক্রাশড স্টোন বাংলাদেশের কাছেই বিক্রি করে।

দেশের চাহিদা মিটিয়ে যে পাথর আমরা তাদের কাছে বিক্রি করতাম সেই পাথরই পরিবেশ রক্ষার আড়ালে তারা আমাদের কাছে বিক্রি করছে। আমরা ফ্রী পাওয়া পাথর বিপুল ডলারের বিনিময়ে কিনে নিচ্ছি।

বিনিময়ে আমাদের হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, অর্থশত কোয়ারি বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। আর এর ফাঁকে কপালে ডেকে এনেছি বন্যা নামক ভয়ংকর আশীর্বাদ।

২০২২ এবং ২৪ সালে সিলেট অঞ্চলে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার আগমন ঘটে। ২২ সালের জুনে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল ১৪৫২ মিমি আর ২৪ এর জুনে ২১৫৫ মিমি। মেঘালয় চেরিপুঞ্জির বৃষ্টির পানি পাহাড়ি ঢল হয়ে ডাউকি নদী ও সারি নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

পাথর উত্তোলন বন্ধের ফলে এই নদীগুলোর নাব্যতা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। পরিবেশ রক্ষার প্রতিদানে আমরা ডেকে নিয়ে আসি ভয়াল বন্যার করাল গ্রাসকে।

এই অঞ্চলের পাথর ছিল আমাদের জন্যে আশীর্বাদ, প্রকৃতির অন্যন্য অর্থনৈতিক উপহার। রাষ্ট্র এই পাথর শিল্পকে চালু রাখলেই আমাদের অর্থনীতি শক্তিশালী হত, নির্মাণ শিল্পের আমদানি নির্ভরতা কাটিয়ে আমরা রপ্তানিতে এগিয়ে যেতাম।

আপনার পাথরের আবেগকে পুঁজি করেই ভারত আমাদের পকেট কেটে নিয়েছে। আপনি সাদা পাথরের ঝলকানিতে অন্ধ হয়ে বানের পানিতে হাবুডুবু খেয়েছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button