অন্যান্যআইন-অপরাধবৃহত্তর উত্তরা
উত্তরায় হোটেলের অন্তরালে পতিতাবৃত্তি, ১৯ নারীসহ গ্রেপ্তার ২১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা:
রাজধানীর উত্তরায় হোটেলের অন্তরালে পতিতাবৃত্তির অভিযোগে ১৯ নারীসহ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীও রয়েছেন। তবে মূল হোতারা ধরা ছোয়ার বাইরে।
উত্তরার আব্দুল্লাহপুরের ‘হোটেল ওয়ান স্টার’ ও ‘হোটেল ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল’ থেকে বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, শিলা আক্তার (২১), মিতু আক্তার (২২), তানিয়া আক্তার (২২), রোকসানা আক্তার (২২), শিল্পী আক্তার (২০), ফারজানা আক্তার (১৯), ফারজানা আক্তার (১৯), লাবনী বেগম (২৪), মোছা. রূপা (২০), আসমা বেগম (৩৫), সুমি বেগম (২৭), আনোয়ারা আক্তার (২১), আফরিন নুসরাত মায়া (২১), মোছা. রুজিনা (৩৫), আশা ইসলাম বর্ষা (২২), উম্মে কুলসুম (২২), মনোয়ারা আক্তার (২৫), রাশিদা সেন (৩০), মীম আক্তার (২০), মো. আপেল (২৫), জহিরুল ইসলাম (৪২) ও শেরপুর জেলার ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরী।
জানা গেছে, উত্তরা পশ্চিম থানার কিলো-৯১, হোন্ডা মোবাইল-৯১ টহল পার্টি ছাড়াও কয়েকজন পুলিশের চার জন উপ-পরিদর্শক (এসআই) অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। অভিযান শেষে গ্রেপ্তারকৃতদের তিনটি গাড়িতে করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
অভিযানের পর পরই আব্দুল্লাহপুরের বেলমন্ট টাওয়ারের নিচ তলা হোটেল ওয়ান স্টারের গেটে গিয়ে যায়, পাঁচ সাতজন যুবক বয়সী হোটেলের স্টাফ অপেক্ষা করছে, আর নিজেরা কানখোসা করছে। গলির ভেতরের প্রবেশ গেট তালাবদ্ধ। প্রতিবেদককে দেখেই খদ্দের মনে করে তারা বলেন- আজ চলে যান, একটু ঝামেলা হয়েছে। দু’দিন পর আসেন।
কি হয়েছে, জানতে চাইলে তারা বলেন- ‘কুকুর তো হাড্ডি খাওয়ার পর হা করে থাকে, আবার খাওয়ার জন্য। কিন্তু ওরা (পুলিশ) খাওয়ার পর মুখ মুছে ফেলে। আবার কামড়ও দেয়। আরো বেশি খাওয়ার জন্য কামড়ে দিয়েছে।’
অপরদিকে ওয়ান স্টার হোটের পাশের ৭/ডি সড়কের ২৪ নম্বর ভবনের হোটেল ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল গিয়ে দেখা যায়, অভিযানের পরও সেখানে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত যুবক-যুবতীদের আগোনা। হোটেল ম্যানেজার আপন’সহ অন্যান্যদের ভাবখানা এমন যে, সেখানে কিছুই হয় নাই। অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে ম্যানেজার আপন বলেন- এখানে কোন অভিযানই হয় নাই। তাহলে কাদেরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- ‘আমি তো ছিলাম না, কিছুই জানি না। এসব কোন সমস্যাই না। সব ঠিক ঠাকই আছে।’
এদিকে আব্দুল্লাহপুরে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- দীর্ঘ দিন ধরে প্রকাশ্যে মসজিদের পাশে হোটেলের নামে পতিতাবৃত্তি করে আসলেও কেউ দেখে নি। নিরাপত্তার জন্য পরিচয় লুকিয়ে ফোন করে পুলিশকে অভিযোগ করলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি। বৃহস্পতিবার দুটি হোটেলে থেকে শুধু মাত্র অবৈধ কাজে লিপ্ত নারীদের নিয়ে গেলেও মূল হোতারা বাইরে ঘুরাফেরা করছে। তারা আরো বলেন- নিচ তলার ওয়ান স্টারে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু একই কার্যক্রম চালালেও টাকার জোরে হোটেল আকবরে রহস্যজনক কারণে পুলিশের ছায়াও পরে নি।
অভিযান প্রসঙ্গে জানতে উত্তরা পশ্চিম থানায় যাওয়ার পর ডিউটি অফিসার এসআই আরিফুল ইসলাম প্রায় দীর্ঘ চার ঘন্টা প্রতিবেদকের সঙ্গে কালক্ষেপণ করেন। পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুর রহিম মোল্লার সঙ্গে কয়েক ঘন্টা যোগাযোগের চেষ্টার পর তিনি বলেন, ‘যেগুলো হোটেল একাবারেই মানসম্মত না, সেগুলোকে আমরা বারংবার নোটিফিকেশন দিয়েছি। হোটেল মালিকদেরও ভালো করা প্রয়োজন। এরা এতটাই নোংরা যে আসলে ইয়ে করা যায় না। সেক্ষেত্রে মানুষের অভিযোগের ভিত্তিতে মাঝে মধ্যেই অভিযান দিতে হয়।’
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রসঙ্গে জানতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে আজ (শুক্রবার) দুপুর পর্যন্ত চেষ্টা করা হলেও জানায় নি পুলিশ।