বিমানবন্দরে সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীদের কর ফাঁকির অভিযোগ

যারা আমদানি রপ্তানি ব্যবসার সাথে জড়িত তারা সি এন্ড এফ শব্দটির সাথে পরিচিত। সি এন্ড এফ শব্দটি আসলে একটা সংক্ষিপ্ত রুপ।
পূর্ণ রুপ হল Customs Clearing and Forwarding ।
সি এন্ড এফ ব্যবসা কি ?
সি এন্ড এফ ব্যবসা টা খুব জটিল একটা ব্যবসা। যে কেউ চাইলেই এই ব্যবসায় নামতে পারবেন না। সি এন্ড এফ ব্যবসা করার আগে সি এন্ড এফ এর কাজে প্রচুর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে আপনার। সি এন্ড এফ ব্যবসা করার জন্য সরকার থেকে একটা বিশেষ ধরণের লাইসেন্স নিতে হয়। এটাকে সরকারি ভাষায় প্রোপাইটর কার্ড বলে। এই লাইসেঞ্চের অধীনে সরকার একটা ইউনিক নম্বর দিবে। প্রত্যেকটা পেপার কাস্টমসে সাবমিট করার আগে সি এন্ড এফ কে এই বিশেষ নম্বার ব্যবহার করতে হয়। এই ব্যবসা যেমন লাভের তেমনি প্রচুর রিস্কের। সি এন্ড এফ ব্যবসা করে অনেকেই রাতারাতি কোটি পতি বনে যান, আবার অনেকেই ফকির হয়ে যান। আসলে সরকার সি এন্ড এফ দের জন্য টোটাল অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালুর ০০.৫০% কমিশন নির্ধারণ করে দিয়েছিলো। কিন্তু পণ্য ভেদে সি এন্ড এফ রা এই কমিশন ২% ও নিয়ে থাকেন। আবার অনেকে সি এন্ড এফ এর সাথে কন্টাক্ট করেন ট্যাক্স সহ। এখান থেকেও অনেক আয় আসে। সি এন্ড এফ পেশা সম্মান জনক হলেও বর্তমানে অনেকেই এটাকে ভিন্ন খাতে নিয়ে অবৈধ পথে আয়ের উৎস বানিয়ে ফেলেছেন।
বেশ কয়েক দিন আগে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় যে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার রিফ্রিজারেন্ট (এসি ও ফ্রিজের ব্যবহৃত গ্যাস) আমদানির অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে রিফ্রিজারেন্ট আমদানিকারক ও জড়িত সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পরিবেশ অধিদফতরকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সচিব তরফদার সোহেল রহমান। তিনি বাংলাদেশ রিফ্রিজারেশন এন্ড এয়ারকন্ডিশনিং মার্চেন্টস এসোসিয়েশন ব্রামার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
(২০ এপ্রিল) এ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগের কপি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, কাস্টমস গোয়েন্দার মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ব্রামার প্রশাসক তরফদার সোহেল রহমান বলেন, রিফ্রিজারেন্ট অবৈধভাবে আমদানির বিষয়ে আমি বেশকিছু অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু এই গ্যাসের মান ঠিক না থাকলে বড় রকমের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে, সেজন্য বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদফতর ও বিস্ফোরক পরিদফতরে চিঠি দিয়েছি। তারাই বিষয়টি তদন্ত করবেন।
ব্রামার প্রশাসক তরফদার সোহেল রহমানের দেয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১২ এপ্রিল পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক এইচএফসি কোটার অনুকূলে রিফ্রিজারেন্ট আমদানির লাইসেন্স অনুমোদন করা হয়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স অনুমোদনের আগেই রিফ্রিজারেন্ট আমদানি করে বন্দর হতে পণ্য খালাস করে। একইভাবে আমদানি করা রিফ্রিজারেন্ট কন্টেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে।
আরো উল্লেখ সিপিডির গবেষণায় ২০২৩ সালে সারাদেশে করফাকি ২ লক্ষ ২৬ হজার কোটি টাকা। ভাবা যায় কি ভাবে হচ্ছে সরকারকে। এর সাথে জড়িত কিছু অসাধু কাস্টম কর্মকর্তা কর্মচারী। কর ফাঁকি রোধ কল্পে গত ১৫ই মে থেকে এনবিআর ১৬১৩৪ একটি হট লাইন নাম্বার চালু করেন। তবুও থেমে নেই কর ফাঁকি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সিএন্ডএফ এজেন্ট ও কাস্টম অফিসে ঘুরেফিরে কর ফাঁকির মিস্টার অভিযোগ পাওয়া যায়। নামে বেনামের পণ্য বিমানবন্দর এর কার্গো ভবনে প্রবেশের তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু প্রশ্ন হল এই পণ্যগুলো কাদের মাধ্যমে খালাস হয় এবং কিভাবে খালাস হয়।
আগামীতে তার তথ্য উপাত্ত নিয়ে একটি প্রকাশ করা হবে। এমনও অভিযোগ উঠেছে যে অনেক সিএন্ডডে ব্যবসায়ী লোকসান দেখিয়ে তার লাইসেন্সটি নবায়ন পর্যন্ত করেননি। কাস্টমসের কিছু কর্মকর্তাদের সাথে অবৈধ যোগ সাজসের কারণে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এই সকল সিএনএফ ব্যবসায়ীরা বনে যাচ্ছেন কোটি পতি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কার্গো ভবনের কিছু লোক বলেন কিছু কিছু সি অ্যান্ড এফ ব্যবসায়ী স্বর্ণ চালানের সাথেও জড়িত। এরা কারা এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
সি এন্ড এফ এর কর ফাকির শাস্তি
যদি কোন সি এন্ড এফ অবৈধ কাজে লিপ্ত হন অথবা সকারের সূল্ক প্রদানে ফাঁকি দেন তবে সরকর নিচের বিধি মোতাবেক শাস্তি প্রদান করে থাকে
ক) সি এন্ড এফ এর অবৈধ কাজ যদি শুল্ক কর ফাঁকির সাথে সংশ্লিষ্ট না হয় তবে কমপক্ষে ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্ছ ২ (দুই) লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে।
(খ) সি এন্ড এফ কর্তৃক শুল্ক কর ফাঁকির প্রচেষ্টা করা হলে এবং উক্ত কর ফাঁকি সংঘটিত না হওয়া সত্বেও উক্ত ফাঁকি সংঘটিত হলে যে পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি সাধিত হতো তার অনধিক ২৫ (পঁচিশ) শতাংশ অথবা ১ (এক) লক্ষ টাকার মধ্যে যা অধিক হয় সে পরিমাণ টাকা জরিমানা দিতে হবে।