বৃহত্তর উত্তরা

উত্তরায় বাসা বাড়িতে গ্যাস সংকটে নানামুখী দুর্ভোগ

মুক্তমন রিপোর্ট : অবৈধ গ্যাস সংযোগের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় উত্তরার নতুন ওয়ার্ডের আবাসিক বাসা বাড়িতে দেখা দিয়েছে গ্যাসের চরম সংকট।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশেষ করে গত ৩-৪ মাস যাবত ডিএনসিসির নতুন ওয়ার্ডগুলোতে গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।

গ্যাস না পেয়ে এখানকার বাসিন্দাদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রতিনিয়ত গ্যাস সংকটের কারণে সন্তানের জন্য রান্না করতে না পেরে নিম্নবিত্ত পরিবারের মধ্যে চলছে হাহাকার!

গেল রমজানের শুরু থেকেই এই নতুন ওয়ার্ড এলাকাগুলোয় কমতে শুরু করে গ‌্যাসের চাপ। বিশেষ করে পিক আওয়ারে গ‌্যাসের দেখাই যেন মিলছিলো না। সম্প্রতি সময়ে গ্যাসের এই সংকট বাড়তে বাড়তে চরম আকার ধারণ করেছে। ভোর থেকেই সারাদিন উত্তরার অনেক বাসা বাড়িতে গ্যাস থাকে না।কোথাও কোথাও গ্যাসের চাপ জিরো। কখনো কখনো গ্যাস আসে রাত ১২টার পর।

সিলিন্ডার গ্যাস কেনার সামর্থ না থাকায় এক প্রকার বাধ্য হয়ে রাত জেগে রান্না করতে গিয়ে নির্ঘুমে অসুস্থ হয়ে উঠছে গৃহবধূরা।

এ ক্ষেত্রে চাকুরী জীবীরা পড়েছে বেশি বিপদে। গৃহীনীরা প্রতিদিন তাদের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সন্তানদের জন্য নাস্তা বানাতে যুদ্ধে নামতে হয়। গ্যাস সংকট দীর্ঘ হওয়ায় কেউ কেউ তৈরি করছেন মাটির চুলা।

অন্যদিকে সমর্থবানরা হোটেলের উপর নির্বর, তারা সকাল ও দুপুরের খাবার হোটেলেই সারায়, তবে হোটেলের খাবার খেয়ে অনেকে আবার অসুস্থ হয়ে উঠে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, উত্তরার নতুন ওয়ার্ড গুলোর পাড়া মহল্লায় গড়ে উঠা ওয়াস ফ্যাক্টরীতে সয়লাব। এ সব অবৈধ ফ্যাক্টরীতে সংযোগের কারণে দিনে-রাতে চুরি হচ্ছে গ্যাস।

ভুক্তভোগীরা বলেন, এখানকার কিছু কিছু বাসাবাড়ি ও অবৈধ ওয়াস ফ্যাক্টরীতে রয়েছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। এর ফলে আবাসিক ভবন গুলোতে দিনের বেলায় গ্যাস থাকেনা।

তুরাগে পাকুরিয়া এলাকার গৃহিণী সুমি বলেন, তিনি রাত ১২ টার সময় চুলায় আগুন জ্বালাতে চাবি চালু করে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করেন।চুলায় সোঁ সোঁ আওয়াজ আসে কিন্তু আগুন জ্বলে না। এমন ঘটনায় তিনি হতাস।

দীর্ঘদিন যাবত আবাসিক সংযোগে তিতাস গ্রাহকরা গ্যাস না পাওয়ার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে বৃহত্তর উত্তরা এলাকার লাখ লাখ মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, তিতাসগ্যাস কম্পানীর অসাধু কিছু কর্মকর্তার সাথে আতাঁত করে বিভিন্ন ফ্যাক্টরির মালিকরা তাদের চাহিদা মেটাতে গ্যাস পাইপের মুখে শক্তিশালী রাইজার বসিয়ে অবৈধ পন্থায় গ্যাস টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

এর ফলে উত্তরখান দক্ষিণখান তুরাগসহ উত্তরার বাসাবাড়িতে দিন-রাত মিলে ৬ ঘন্টার বেশি গ্যাস সরবরাহ থাকে না। এ সংকটের কারণ হিসেবে এখানকার বাসিন্দারা তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন।

তারা আরো বলেন, তিতাস গ্যাস ট্রাসমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড’র কর্মকর্তারা এলাকার শতাধিক অবৈধ ফ্যাক্টরীতে গ্যাস সংযোগ দিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

প্রতিদিন লাইন থেকে চুরি করে গ্যাস টেনে নেওয়ার ফলে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

কর্তৃপক্ষ অবৈধ গ্যাস সংযোগের তথ্য পেলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন সহ মালামাল জব্দ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ায় আশ্বাস দিলে ও কাজের কাজ কিছুই করে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, বেকারি,ওয়াস, ডায়িং ও ছোট বড় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী। এখানকার স্থানীয় বাড়ির মালিকগণ বলেন, ব্যাঙের ছাতার মত আবাসিক এলাকায় এলোপাথাড়ি ভাবে গড়ে উঠা ফ্যাক্টরী গুলোতে দিনে রাতে গ্যাস সরবরাহ থাকে।

গ্যাস সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ।

তিতাস ট্রাস্টমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এর কর্মকর্তারা বলেন,উত্তরার বেকারি, ওয়াস এবং ডায়িং ফ্যাক্টরী গুলোতে খুব শীঘ্রই অভিযান চালাবে তারা। অবৈধ গ্যাস সংযোগের তথ্য পেলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন সহ মালামাল জব্দ করা হবে সে সাথে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button