বৃহত্তর উত্তরা

খেলার মাঠে ফুড কোর্ট অক্ষত, ক্ষোভে উত্তাল এলাকাবাসী

বিশেষ প্রতিনিধি: এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের জোরালো দাবি এবং গণমাধ্যমে নিকুঞ্জের ফুটপাত, খেলার মাঠ এবং অন্যান্য দখলদারিত্ব নিয়ে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন- ডিএনসিসি নিকুঞ্জ এলাকায় একটি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা আক্তার নেলি এই অভিযান পরিচালনা করেন।

ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ ফুটপাত ও রাস্তার পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে উদ্যোগ নিলেও, এলাকার বহুল আলোচিত খেলার মাঠের ভেতরের ফুড কোর্টটি অক্ষত থাকায় নিকুঞ্জ এলাকার শত শত মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।

নিকুঞ্জ-২ এর ১ নম্বর রোডের পূর্ব মাথা থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয় এবং ঢাকা রিজেন্সির পেছন হয়ে ৫ ও ৮ নম্বর রোডস্থ খেলার মাঠের চারপাশে পরিচালনা করা হয়। ফুটপাত ও রাস্তার পাশের বেশ কিছু অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হলেও, সবচেয়ে বড় সমস্যা— খেলার মাঠের অভ্যন্তরে থাকা বহুল আলোচিত সেই ফুড কোর্ট—উচ্ছেদ করা হয়নি।

উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে উপস্থিত শত শত এলাকাবাসী ডিএনসিসির এই কার্যক্রমকে স্বাগত জানালেও, ফুড কোর্টটি উচ্ছেদ না করায় তাৎক্ষণিক তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের দাবি ছিল, খেলার মাঠের পরিবেশ ও উদ্দেশ্য নষ্ট করা এই ফুড কোর্টটিই ছিল মূল উচ্ছেদের লক্ষ্য।

সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা আক্তার নেলির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও তিনি এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেননি।

তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসিসির একজন কর্মকর্তা জানান যে, মাঠটি রাজউকের সম্পত্তি, তাই মাঠের ভেতরের অবৈধ স্থাপনা সরানোর এক্তিয়ার তাদের নয়, সিটি কর্পোরেশনেরও নয়।

ডিএনসিসির এমন ‘বাছাই করা’ উচ্ছেদ অভিযানকে ‘লোকদেখানো’ এবং ‘আইওয়াশ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন স্থানীয়রা।

নিকুঞ্জ এলাকার বাসিন্দা রানা ইব্রাহিম হতাশা ব্যক্ত করে বলেন: “ডিএনসিসির এই লোক দেখানো অভিযান এলাকাবাসীর কোনো উপকারে আসবে না। আমাদের মূল দাবি ছিল খেলার মাঠের ফুড কোর্ট যে কোনো মূল্যে উচ্ছেদ করতে হবে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন সেই মূল সমস্যাটিতে হাতই দিল না, পাশ কাটিয়ে চলে গেল। এটা জনদাবীর প্রতি চরম অবহেলা।”

এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা ও খিলক্ষেত টানপাড়া কল্যাণ সোসাইটির আহ্বায়ক জাহিদ ইকবাল অভিযোগ করেন: “আজকের উচ্ছেদ অভিযানে খেলার মাঠের ফুড কোর্ট না সরিয়ে ডিএনসিসি কার্যত জনদাবীকেই উপেক্ষা করেছে। তাছাড়া, কথা থাকলেও ১ নম্বর রোডের পূর্ব প্রান্ত থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। কোনো কাজের কাজ না হলেও এলাকাবাসী জাস্ট ‘অতি দ্রুত’ শেষ করে দেওয়া ডিএনসিসির আইওয়াশ-সদৃশ একটি উচ্ছেদ অভিযান প্রত্যক্ষ করলো। জনগণের সবচেয়ে বড় দাবি ছিল খেলার মাঠে কোনোভাবেই যেন ফুড কোর্ট থাকতে না পারে।”

এলাকার জনগণের জানমাল রক্ষায় নিজেদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন: “এলাকার জনগণের জানমাল রক্ষায় জনস্বার্থে ও জনকল্যাণে আমরা যেকোনো উদ্যোগ নিতে সদা প্রস্তুত। এখন থেকে জনচলাচলের রাস্তায় কোনো প্রতিবন্ধকতা বরদাস্ত করা হবে না। জনজীবন নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে খিলক্ষেত থানা পুলিশ জনগণকে সাথে নিয়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে।”

নিকুঞ্জবাসী দীর্ঘদিন ধরে জোরালোভাবে দাবি করে আসছিলেন যে, উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে মাঠের ভেতরের ফুড কোর্টের চির অবসান ঘটানো হোক। এ নিয়ে গণমাধ্যমেও অসংখ্য সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু ডিএনসিসি খুব স্বল্প সময়ে অভিযান পরিচালনা করলেও খেলার মাঠ থেকে ফুড কোর্ট অপসারণ না করায়, সমগ্র নিকুঞ্জবাসী আজ স্বস্তি ও আনন্দের বদলে তীব্র ক্ষোভে ফুঁসছে। স্থানীয়রা বলছেন, একে অন্যের উপর দোষ না চাপিয়ে বা আইনি মারপ্যাঁচে না জড়িয়ে জনগণের স্বার্থে ডিএনসিসি এবং রাজউকের সমন্বিত উদ্যোগে অবিলম্বে নিকুঞ্জের খেলার মাঠ থেকে ফুড কোর্টটি উচ্ছেদ করা হোক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button