মত প্রকাশ

ঐক্যমত কমিশনের বৈঠকে বিএনপি’র ওয়াকআউট এবং..

আমীন আল রশীদ

আজকে সকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক থেকে বেরিয়ে গেছে বিএনপি। মানে ওয়াকআউট করেছে।
অনেকে বলেন, প্রায় ৩০টি দল ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশ নিচ্ছে। ২৯টি দল যদি কোনো বিষয়ে একমত হয় আর বিএনপি যদি একমত না হয়, তাহলেও কি ওই প্রস্তাবটি গৃহীত হবে না? কারণ গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত মেনে নেওয়ার রেওয়াজ আছে।
এখানে একটা বিষয় খুব পরিষ্কার বোঝা দরকার যে, কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে একমাত্র বিএনপিরই রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে। তাদের বিরাট জনভিত্তি আছে। বিএনপির একার যে জনভিত্তি ও জনপ্রিয়তা, বাকি ২৯টি দল মিলেও তা নেই। সুতরাং, কোনো একটি বিষয় বিএনপি যদি না মানে বা ভিন্ন অবস্থানে থাকে, সেটিকে আপনি গণতন্ত্রের ওই মেজরিটি থিওরি দিয়ে মানাতে পারবেন না। যদি মানাতে চান তাহলে ক্যাওয়াজ তৈরি হবে।
এই সংলাপে যদি অতীতে এককভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করতো এবং তখন বিএনপি কোনো একটি বিষয়ে একমত না হলে আপনি বলতে পারতেন যে, বাকি বড় দলগুলো তো একমত আছে। এখন সেটা বলার সুযোগ নেই।
এখন এই সংলাপে যেসব দল অংশ নিচ্ছে, তাদের অধিকাংশের নামই দেশের সাধারণ মানুষ জানে না। ঠিকমতো দলের নামও বলতে পারবে না। সুষ্ঠু ভোট হলে ওই দলগুলোর নেতারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানও হতে পারবেন না।
সুতরাং, এখন এই সংলাপে যেহেতু আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেই, ফলে এখানে বিএনপিই সবচেয়ে বড় দল এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দল। তারা যদি কোনো একটি বিষয়ে যৌক্তিক কারণে ভিন্ন অবস্থানে থাকে, বাকি ২৯টি দল ও জোট একমত হয়েছে বলেই আপনি সেটা কার্যকর করতে পারবেন না। কারণ এখানে বিএনপিকে অন্য কোনো একটি দল বা একটি জোটের সঙ্গে তুলনা করার সুযোগ নেই।
মেজরিটি কোনো একটি বিষয়ে একমত হলেই সেটা মানতে হবে, এটা সব সময় সঠিক নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে দেখতে হবে মেজরিটির অংশ আসলে কারা? তাদের জনভিত্তি, জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞতা কেমন?
আমি এর আগেও বলেছি এবং এখনও বলছি, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল কাজ একটি অবাধ-সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে যাওয়া এবং সেটি খুব দ্রুত।
কিন্তু এই মূল কাজটি না করে তারা সংস্কারের নামে যেসব উদ্যোগ নিয়েছে এবং যেভাবে সময় নষ্ট করছে, তাতে কোথাও কোনো সংস্কার তো হচ্ছেই না, বরং নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত করে দিয়ে কিছু অদক্ষ লোকের শাসনকে দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে। একটা নতুন লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণিকে বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপি বা অন্য কোনো দল ক্ষমতায় এলে লুটপাট বন্ধ হয়ে যাবে? হয়তো হবে না। কিন্তু রাষ্ট্র একটি পলিটিক্যাল ইনস্টিটিউশন, অতএব ইট মাস্ট রান বাই দ্য পলিটিশিয়ানস। নট বাই দ্য সুশীল।
আপনি খুব ভালো মানুষ, পড়াশোনা জানেন। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে আপনাকে পুলিশের আইজি বা সেনাপ্রধান বানিয়ে দিলেই আপনি সেটা চালাতে পারবেন!

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট (লেখাটি ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া)।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button