মত প্রকাশ

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা নেয়ার আজব এক নিয়ম চালু হয়েছে

Mohammad Taslim Uddin

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা নেয়ার আজব এক নিয়ম চালু হয়েছে, যা আমি মোটেও কল্যাণকর বলে মনে করি না।
পৃথিবীর কোথাও এ নিয়ম চালু নেই।
একজন ক্যান্ডিডেট ৪ বছরের স্নাতক আর ১/২ বছরের মাস্টার্স সম্পন্ন করে ভাল রেজাল্টের যে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পেরেছে সেটাকে অবমূল্যায়ন করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
হঠাৎ করে দু’জন এক্সপার্ট কর্তৃক প্রণীত প্রশ্নের উপর এক ঘণ্টার পরীক্ষায় তুলনামূলক কম যোগ্যতাসম্পন্ন একজন ক্যান্ডিডেট উত্তীর্ণ হয়ে যেতে পারে, যদি তার প্রশ্ন ফরচুনেটলী কমন পড়ে যায়। অপর দিকে, অপেক্ষাকৃত বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন একজন ক্যান্ডিডেট দুর্ভাগ্যক্রমে প্রশ্ন কমন না পড়ার কারণে ঝরে পড়তে পারে।
একই কোর্সের উপর ভিন্ন ভিন্ন লিখক ভিন্ন ভিন্ন এপ্রোচ অনুসরণ করে বই লিখতে পারেন। একইভাবে, একই কোর্স দু’জন শিক্ষক দু’ধরণের এপ্রোচে পড়াবেন সেটাই স্বাভাবিক। যেমন, ৩য় বর্ষের ম্যাক্রোইকনোমিক্স পড়াতে গিয়ে আমি ডায়নামিক এপ্রোচ ফলো করেছি, যেখানে আমার আগে-পরের ওস্তাদগণ ভিন্নতর এপ্রোচ ফলো করেছিলেন/করছেন। এখন, লিখিত পরীক্ষায় যদি প্রশ্নকর্তা আমি হই, তাহলে অন্য ওস্তাদের ক্লাসের টপার স্টুডেন্টও ফেল করার সম্ভাবনা প্রবল। তাহলে আমাকে বলুন, মেধাবী নিয়োগ দেয়ার বয়ান কতখানি ভ্যালিড?
একজন ক্যান্ডিডেটের সারাজীবনের রেজাল্ট, এমনকি তার PhD/MPhil, কিংবা তার রিসার্চ পেপারের ওয়েট কি ডাস্টবিনে ফেলে দেবেন?
আমার প্রস্তাব:
১। ক্যান্ডিডেটের স্নাতক এবং মাস্টার্সের গ্রেড, তার PhD এবং PhD প্রদানকারী স্কুলের র‍্যাঙ্কিং, তার গবেষণা, ও অন্যান্য ক্রীডেনশলের ভিত্তিতে নিয়োগ বোর্ডের/সার্চ কমিটির ভোটাভুটির ভিত্তিতে শর্ট-লিস্ট তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে সার্চ কমিটির মেম্বার সংখ্যা কমপক্ষে ৭জন হওয়া বাঞ্ছনীয়, যাতে ভোটাভুটিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়। উল্লেখ্য চাকরির আবেদনে কোনো আবেদন ফি নেয়া যাবে না (যেহেতু ইন্টারভিউতে সকলে ডাক পাবে না)।
২। শর্ট-লিস্টেড ক্যান্ডিডেটদের তিন স্টেজে মূল্যায়ন করতে হবে:
(ক) ক্যান্ডিডেট একটি ডেমো-ক্লাস অফার করবে (এটি ওপেন সেশন);
(খ) জব-পেপার/রিসার্চ পেপার প্রেজেন্টেশন দিবে (এটিও ওপেন সেশন);
(গ) রুদ্ধদ্বার ইন্টারভিউ/মৌখিক পরীক্ষা, যেখানে কেবল সার্চ কমিটির মেম্বারগণ থাকবেন।
শর্ট লিস্টের র‍্যাঙ্কিং এর সাথে ২-নং এর (ক+খ+গ) এর সমন্বয়ে নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে।
উল্লেখ্য: সংশ্লিষ্ট ফ্যাকাল্টির ডিন হবেন সার্চ কমিটির সভাপতি (ভোটাধিকার-বিহীন)। তবে শর্ত হল: তিনি ভোটে নির্বাচিত হবেন না; ডিন নিয়োগ পাবেন রিসার্চ প্রোফাইল, অথবা নিদেনপক্ষে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে, যাতে করে তাঁর মধ্যে ভোটার নিয়োগের টেনডেনসি থাকে মিনিমাম।

লেখক : অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, অর্থনীতি বিভাগ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button