নিকুঞ্জে যাত্রা শুরু করলো “ইকোট্রিপলি” ও “রবের পথ”


বিশেষ প্রতিনিধি: আজকের এই দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে, মানুষের জীবনে ভ্রমণের সংজ্ঞা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। ভ্রমণ এখন আর কেবল গতির নেশা বা চোখ ধাঁধানো দৃশ্যের সন্ধান নয়; এটি এখন আমাদের অন্তরাত্মার সঙ্গে প্রকৃতির গভীরতম সৌন্দর্যের, আর হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে আধ্যাত্মিক শান্তির এক নিবিড় কথোপকথন। মহাকালের সাক্ষী হয়ে, এই গভীরতম উপলব্ধি থেকেই উচ্চারিত হয় সেই অমর বাণী—“ভ্রমণ শুধু পথচলা নয়; এটি প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধের এক পবিত্র অঙ্গীকার, এক আত্মিক দায়।”
এই পবিত্র দর্শনকে পাথেয় করেই, একটি নতুন যুগের সূচনা ঘটিয়ে রাজধানীর বুকে এক মহৎ উদ্দেশ্যে পথচলা শুরু করলো দুটি প্রতিষ্ঠান, যা একই সঙ্গে পৃথিবীর অপার সৌন্দর্য এবং বেহেশতের পথে যাত্রার আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়াল। তারা হলো—প্রথমত, দেশী–বিদেশী Eco-Tourism-এর দায়িত্বশীল, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই ব্যবস্থাপনার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসা “ইকোট্রিপলি (ecoTriply)” এবং দ্বিতীয়ত, হজ্ব–উমরাহ যাত্রীদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, নিষ্ঠা ও আধ্যাত্মিকতার আবরণে মোড়া সেবাদানকারী ধর্মীয় ভ্রমণসেবা প্রতিষ্ঠান “রবের পথ (Rober Path)”।
এই যুগল-প্রতিষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন উপলক্ষে সোমবার রাতে রাজধানীর নিকুঞ্জে এক অপূর্ব, শান্ত ও হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া “খতমে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত ও দোয়া মাহফিল” অনুষ্ঠিত হয়। এটি কোনো সাধারণ বাণিজ্যিক আনুষ্ঠানিকতা ছিল না; ছিল এক পবিত্র যাত্রার প্রারম্ভে সৃষ্টিকর্তার কাছে সম্মিলিতভাবে নতজানু হওয়া। কোরআনের প্রতিটি আয়াতের ধ্বনি যেন উপস্থিত সকলের মনে এক অলৌকিক শান্তি ও শুদ্ধতার পরশ বুলিয়ে দিচ্ছিল—যা এই নতুন পথচলাকে করেছিল আরও অর্থবহ ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন “ইকোট্রিপলি”-এর সম্মানিত প্রধান নির্বাহী এ এম আইয়ুব। তাঁর কণ্ঠে ছিল এক দৃঢ় প্রত্যয়; তিনি ঘোষণা করেন যে, “ইকোট্রিপলি” কেবল পর্যটন নয়, বরং দায়িত্বশীল, পরিবেশবান্ধব এবং সময়নিষ্ঠ পর্যটনে এমন এক নতুন মানদণ্ড স্থাপন করবে, যা ভবিষ্যতে অন্যান্যদের জন্য অনুসরণীয় হবে। তিনি বলেন, আমরা কেবল গন্তব্যে পৌঁছাব না, বরং প্রতিটি পদক্ষেপে প্রকৃতির প্রতি আমাদের ভালোবাসা এবং যত্ন প্রকাশ করব।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ মাওলানা হোসাইন আহমেদ, যার প্রজ্ঞা ও দিকনির্দেশনা নতুন প্রতিষ্ঠান দুটির জন্য এক অমূল্য আশীর্বাদস্বরূপ।
প্রধান আলোচক ও উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক, সমাজকর্মী এবং খিলক্ষেত টানপাড়া কল্যাণ সোসাইটি’র আহবায়ক জাহিদ ইকবাল।
তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, আজকের দিনে যখন মানুষ শান্তি খুঁজছে, তখন এই দুটি প্রতিষ্ঠান—একটি প্রকৃতির কোলে আর অন্যটি পবিত্র ভূমিতে—মানুষের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণে এক নিবিড় আস্থা ও প্রশান্তি নিয়ে এলো।
বিশেষ অতিথিবৃন্দের উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে আরও মহিমান্বিত করে তোলে। তাদের মধ্যে ছিলেন এম. এইচ. সোহেল, সৈকত সরকার , জাকির হোসেন ভুঁইয়া, এবং অটো কর্ণারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ: মাজাহারুল ইসলাম সুমন।
সমাজের বিভিন্ন স্তরের এই গুণীজনদের সমর্থন ছিল প্রতিষ্ঠান দুটির প্রতি জনমানসের গভীর আস্থার প্রতিফলন।
পুরো আয়োজনটি সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করেন “রবের পথ”-এর প্রধান নির্বাহী ওয়ালীউল্লাহ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন AIME Global Network–এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মঈন উদ্দিন জাহাঙ্গীর, যার নেতৃত্ব এই শুভ সূচনাকে দিয়েছে এক ঐতিহাসিক মর্যাদা।

অনুষ্ঠানের সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত ছিল দোয়া ও মোনাজাতের পর্ব। হাফেজ মাওলানা হোসাইন আহমেদ যখন মহান আল্লাহর দরবারে হাত তোলেন, তখন উপস্থিত সকলের চোখ ছলছল করে ওঠে। সেই মুহূর্তের গভীর ভক্তি, আত্মসমর্পণের আবেগ এবং সম্মিলিত মোনাজাতের পবিত্র ধ্বনি যেন আকাশ-বাতাসকে স্পর্শ করে গিয়েছিল। এটি ছিল এক অঙ্গীকার—পবিত্র যাত্রায় কেবল ব্যবসায়িক সফলতা নয়, বরং আধ্যাত্মিক শান্তির নিশ্চয়তা দেওয়া।
বক্তারা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, “রবের পথ” হজ্ব–উমরাহ যাত্রীদের জন্য প্রতিটি মুহূর্তকে করবে নিরাপদ, পবিত্র এবং সুশৃঙ্খল, যেখানে প্রতিটি হাজি ও উমরাহযাত্রী অনুভব করবেন এক অকৃত্রিম আধ্যাত্মিক আশ্রয়।
এই উদ্বোধনী আয়োজনটি শেষে অতিথিদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে এক শান্ত, সৌহার্দ্যপূর্ণ ও অনাবিল প্রশান্তির অনুভূতি। যেন তারা শুধু দুটি প্রতিষ্ঠানের পথচলার সাক্ষী হননি, বরং প্রকৃতির প্রেমে এবং রবের পথে যাত্রার এক নতুন অঙ্গীকারের অংশীদার হয়েছেন। এই শুভ সূচনা ভবিষ্যতের এক উজ্জ্বল দিগন্তের আভাস দেয়, যেখানে থাকবে কেবল আস্থা, দায়িত্বশীলতা এবং অকৃত্রিম শান্তি।



