ক্যাম্পাসবৃহত্তর উত্তরা

উত্তরা হাইস্কুলের দুই ছাত্রের পরীক্ষা কাণ্ডে প্রিন্সিপালের দায় স্বীকার

দোষী সাব্যস্ত করে শ্রেণী শিক্ষককে করলেন বরখাস্ত

বিশেষ প্রতিনিধি: রাজধানীর উত্তরা হাই স্কুল এন্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষা দিতে না পারার ঘটনায় নিজের দায় স্বীকার করেছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইভানা তালুকদার। তবে এ ঘটনায় প্রশাসনিকভাবে নিজের দায় স্বীকার করলেও পুরো দোষ কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষক ড. আমিনুর রহমানের বলে দাবি করে তাকে বরখাস্ত করেছেন বলে জানান তিনি।

আজ (শনিবার) সকাল ১১টায় উত্তরা হাই স্কুল এন্ড কলেজ মিলনায়তনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে সাংবাদিকদের কাছে এসব দাবি করেন ওই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইভানা তালুকদার বলেন, ‘প্রশাসনিকভাবে হ্যা আমার দায় আছে- ঠিক আছে। কিন্তু, দায়িত্বটা আমার ক্লাস টিচারের।’

তিনি বলেন, ‘আমার ওই শ্রেণি শিক্ষক তার সেকশনে ৮৫ জন শিক্ষার্থী ছিল। এই দায়িত্বটা ওই শ্রেণি শিক্ষকের। সে ওই বাচ্চার এডমিট কার্ড মিলিয়ে দেখবে রেজিস্ট্রেশন কার্ডের সাথে ঠিক আছে কিনা। আমার ওই শ্রেণি শিক্ষক ওই কাজটা করেননি।’

বক্তব্যে ইভানা তালুকদার বলেন, ‘এই বাচ্চার জন্য যত প্রকার সাহায্য করতে হয় আমার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে- আমার নিজের পক্ষ থেকে আমি সবকিছু করার জন্য প্রস্তুত।’ তবে পরীক্ষা দিতে না পারা ওই দুই শিক্ষার্থীর একাডেমিক নাম সাংবাদিকরা জানতে চাইলে বলতে পারেননি তিনি। পরে উপস্থিত শিক্ষকদের সহযোগিতায় রেজিস্ট্রেশন কার্ডের ফটোকপি দেখে ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থীর নাম জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ইভানা তালুকদারের দাবি, নিয়মিত ছাত্রদের নাম বাদ দিয়ে অনিয়মিত ও নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ মাশফিকুল রহমান অনি ও মেহেদি হাসান বাপ্পীর নাম ঢুকিয়ে দেয় ওই সহকারি শিক্ষক। এতে ফরম ফিলাপ থেকে বাদ পড়ে যায় সাজ্জাদ হোসেন ও ইয়াছির আরাফাত নামের নিয়মিত দুই শিক্ষার্থী।

অন্যদিকে, পরীক্ষার আগের রাত অভিভাবকসহ ওই দুই শিক্ষার্থীকে কলেজে ডেকে এনে বিষয়টি বাইরের কাউকে জানালে পরীক্ষা দিতে সমস্যা হবে- এমন হুমকির বিষয়ে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইভানা তালুকদারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি তা অস্বীকার করেন। শুধু তাই নয়, স্বামী শফিকুল ইসলামের মধ্যস্থতায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পরদিন পরীক্ষা দেয়ার আশ্বাসের বিষয়টিও সংবাদ সম্মেলনে অস্বীকার করেন তিনি।

এ সময় লিখিত বক্তব্যে সাংবাদিকদের তিনি জানান, এ ঘটনা নিরপেক্ষ তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনটিতে এ সময় প্রতিষ্ঠানটির প্রভাতী শাখা বাংলা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক দীলা আফরোজসহ অন্যান্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখার রেজিস্ট্রেশন ও ফরম ফিলআপ সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে যুক্ত অপর দুই শিক্ষক ও অফিস সহকারীর সঙ্গে তার যোগসাজসের যে অভিযোগ রয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।

অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানের প্রশাসকের সঙ্গে আতাত করে দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের অনিয়ম করে যাচেছন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকা ইভানা তালুকদার। তার এসব কাজে প্রধান সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছে তার স্বামী শফিকুল ইসলাম। স্কুলের কোন অংশ না হয়েও স্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে সকল উন্নয়ন, খরচসহ প্রশাসনিক কাজগুলো সরসরি তদারকি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এদিকে, এ ঘটনায় দায় স্বীকার করা ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালসহ জড়িত সকলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী ওই দুই শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেনের ভাই শাহাদাত হোসেন বলেন, ঘটনার সাথে যারাই জড়িত আছে আমরা তাদের প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। একই দাবি জানিয়েছেন অপর শিক্ষার্থী ইয়াসির আরাফাতের মা বিলকিস বেগমও।

উল্লেখ্য, নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং পরীক্ষার যাবতীয় ফি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করেও কলেজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক ও এইচএসসি সমমান পরীক্ষার প্রবেশপত্র পায়নি উত্তরা হাই স্কুল এন্ড কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন ও ইয়াসির আরাফাত।

এ নিয়ে একাধিক পত্র-পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয় এবং প্রতিষ্ঠানটির এক শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর পর পরই কলেজ কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে উঠেছে।

শুক্রবার ওই দুই শিক্ষার্থী স্কুলের গেটের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে পুরো বিষয়টি গণমাধ্যমের সামনে খোলাসা করেন। তারা তখন দাবি করেন যে, প্রধান শিক্ষিকাসহ কয়েকজন শিক্ষক তাদের আসনটি বড় অংকের অর্থের বিনিময়ে বহিরাগত দুই শিক্ষার্থীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এমন দাবির পর শনিবার পুরো ঘটনার দায় স্বীকার করে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধান শিক্ষিকা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button