রাজনীতি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণায় ‘আপ বাংলাদেশ’ প্ল্যাটফর্মের আত্মপ্রকাশ

মুক্তমন রিপোর্ট : ফ্যাসিবাদ, আধিপত্যবাদ, ধর্মবিদ্বেষ এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করল জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম “ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)”।

আজ শুক্রবার বিকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সকল সংগঠকের মতামতের ভিত্তিতে আলী আহসান জুনায়েদকে আহ্বায়ক ও আরেফিন মোহাম্মদ হিযবুল্লাহকে সদস্য সচিব করে “আপ বাংলাদেশ”-এর আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন জুলাই বিপ্লবের শহীদ ওসমান পাটওয়ারীর পিতা আব্দুর রহমান। এছাড়াও মুখপাত্র হিসেবে শাহরিন সুলতানা ইরা, প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে রাফে সালমান রিফাত এবং প্রধান সংগঠক হিসেবে নাঈম আহমেদ মনোনীত হয়েছেন। অনুষ্ঠানটিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সমাজকর্মী, গবেষক, পিলখানার শহীদ পরিবারবৃন্দ, জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ, আহত যোদ্ধা ও তরুণ প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়া শহীদের পিতা বলেন, “আমাদের সন্তানদের খুনিরা চোখের সামনে ঘুরে বেরাচ্ছে। আজ নয় মাস চলে গেলেও দৃশ্যমান কোন বিচারের ব্যবস্থা আমরা দেখতে পাইনি। বিচারের শুরুতেই খুনী আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।”

সংগঠনের পক্ষে ৮২ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেন আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ। তিনি বলেন, জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করাই হবে আপ বাংলাদেশের প্রধান উদ্দেশ্য।

১৯৪৭-১৯৭১-২০২৪ এর বিপ্লবকে ধারণ করে, বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন, সমাজের সর্বস্তরে যোগ্য ও নৈতিক নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠা, সামাজিক সুবিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠাকরণ এবং ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সামাজিক চুক্তির পুনর্বহাল এর মাধ্যমে বৈষম্যহীন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করার ভিশনকে সামনে নিয়ে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্ল্যাটফর্মটি।
আর মিশন হিসেবে পিলখানা, শাপলা ও জুলাই গণহত্যার মতো ভয়াবহ অপরাধের বিচার, ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ, পাচারকৃত হাজার হাজার কোটি টাকা দেশে ফিরিয়ে আনা এবং জুলাইয়ের আহত যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারকে আর্থ-সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার দাবীতে জনমত ও রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলাকে গ্রহণ করেছে এটি।

এছাড়াও নিম্নোক্ত মোট ১৫ কাজের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল রাজনৈতিক দল ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক সকল প্ল্যাটফর্মের সাথে সমন্বয় করে জুলাই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে জনমত গঠন ও রাজনৈতিক আন্দোলন চলমান রাখবে “আপ বাংলাদেশ”: পিলখানা, শাপলা ও জুলাই গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ ও হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করা, সকল জুলাই শহীদ ও আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, স্থায়ী পুনর্বাসন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক আজাদী, এবং শরীরিক-মানসিকতা স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা। আওয়ামীলীগ আমলে সকল গুম, হত্যা, ও অবিচারসহ পিলখানা গণহত্যা, শাপলা হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে রাজনৈতিক চাপ দেওয়া। আপামর বাংলার সংস্কৃতি ও বাঙালি মুসলমানদের সাংস্কৃতি পুনর্জীবিত করে বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ফিরে আনতে কাজ করা।
সকল আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে শক্তিশালী রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করে আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মুক্তিতে দীর্ঘ মেয়াদী কাজ করা। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের গৌরবান্বিত ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ধর্মবিশ্বাস ও মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে একটি টেকসই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে উদ্যমী হওয়া। সকল ধর্মের মানুষের আচার-অনুষ্ঠানকে সম্মান প্রদর্শন, নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধকে সমুন্নত রেখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনা। মুসলমান, হিন্দু বা অন্য কোনো ধর্মের অনুসারীদের মাঝে; কিংবা পাহাড়ি ও সমতলের মানুষের মধ্যে সকল ধরনের বৈষম্য দূর করা।
বাংলাদেশের নারী ও কিশোরীদের সামাজিক, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রদান করা, শালীন সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশ তৈরি করা এবং রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সকল সেক্টরের নারীদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা। সকল ধর্ষণ মামলার দ্রুত বিচার, ধর্ষকের সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিতকরণ করতে জনগনকে সাথে নিয়ে কাজ করে যাওয়া। দেশের সকল সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, পাহাড়ি, জেলে সম্প্রদায়ের আর্থ-সামাজিক মুক্তি নিশ্চিত করতে প্রাইভেট সেক্টরের সাথে সমন্বয় করে টেকসই অর্থনৈতিক আজাদি নিশ্চিত করতে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাওয়া৷ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও নৈতিক শিক্ষার সমন্বিত প্রয়াসের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা।
শিক্ষা, সরকারি-বেসরকারি চাকরি, স্বাস্থ্যসহ সকল খাতে সব ধরনের কোটা, বৈষম্য দূর করে মেধাকে প্রধান্য দিয়ে নারী-পুরুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা। বেকার যুব সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে নতুন নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করা। আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে ‘উইন-উইন’ ভিত্তিতে সম্প্রসারণ করা এবং রাষ্ট্রকে যেকোনো ধরনের আধিপত্যবাদী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চুক্তি থেকে দূরে রাখতে চাপ সৃষ্টি করা। একই সঙ্গে, বিদ্যমান যেসব আধিপত্যমূলক চুক্তি রয়েছে, সেগুলো বাতিল বা সংশোধনের জন্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা। কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা, সার, সেচ ও বিদ্যুতের নিশ্চয়তা প্রদানের মাধ্যমে কৃষিতে স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলা। জুলাইয়ের অন্যতম প্রধান সহযোদ্ধা আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। তাদের ত্যাগের মধ্য দিয়ে অর্জিত রেমিট্যান্স যাদু আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ৷ তাই সকল প্রবাসী বাংলাদেশি ভাইবোন ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, এয়ারপোর্টে তাদের যেসকল অপ্রয়োজনীয় ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়, সেগুলা দূর করা ও যাত্রীদের কষ্ট লাঘবে কার্রযকরী ব্যবস্থা গ্রহণে সরকাররে চাপে রাখা৷
৬৮ হাজার গ্রামের দেশ বাংলাদেশের সীমান্ত সুরক্ষায় গ্রাম-প্রতিরক্ষা কমিটি গড়ে তুলে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে সীমান্ত প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীকে সহযোগিতা করা। ছিন্নমূল মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয় ও প্রাইভেট উদ্যোগের সমন্বয়ে মাথাগোজার আশ্রয় নিশ্চিতে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাওয়া৷

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button